বাসস
  ০৮ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৯

লাল টকটকে হবিগঞ্জের শংকরপাশা জামে মসজিদ

প্রায় সাড়ে ৮০০ বছরের ঐতিহ্যের ধারক হবিগঞ্জের লাল টকটকে শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। ছবি: বাসস

মোহাম্মদ নূর উদ্দিন :

হবিগঞ্জ, ৮ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : প্রায় সাড়ে ৮০০ বছরের ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আছে হবিগঞ্জে লাল টকটকে শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। অপরূপ সৌন্দর্যের পুরাকীর্তিতে সাজানো এ মসজিদটিতে নির্মাণের পর থেকে কোনো ধরনের সংস্কার হয়নি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় তাতে কোনো কাজ করতে পারছেন না স্থানীয়রাও।

দূর থেকে দেখলে যে কারও দৃষ্টি কাড়ে ঐতিহ্যবাহী লাল টকটকে এ মসজিদটি। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কবরস্থান। মসজিদের দক্ষিণে রয়েছে হযরত শাহ জালাল (রহ.)-এর সফর সঙ্গী হযরত শাহ মজলিস আমিন (রহ.)-এর কবর।

প্রকৃতপক্ষে কত বছর পূর্বে এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল স্থানীয়রা এর সঠিক তথ্য জানেন না। অনেকেই অনেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন মুঘল আমলে আবার কেউ বলছেন কত সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে তা অনুমান করা কঠিন।

অনেকেই এ মসজিদকে গায়েবী মসজিদি বলেও আখ্যায়িত করেন, কেননা এলাকার পূর্ব পুরুষেরা পাহাড় পরিস্কার করতে গিয়ে এ মসজিদের সন্ধান পান বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, ১২০৮ সালে মুঘল আমলে সম্রাট আলা উদ্দিন হোসেন শাহর আমলে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামে শাহী জামে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শুরুতে মসজিদটির নাম শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ থাকলেও বর্তমানে এর নামকরণ করা হয়েছে উচাইল শাহী জামে মসজিদ।

প্রায় প্রতিদিনই এখানে মাজার জিয়ারত ও মসজিদ দেখতে আসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন। মসজিদটির কাছে গেলেই ভেসে উঠে নানা কারুকাজ। প্রাচীন আমলের নানান রূপময়তায় সাজানো রয়েছে এর ভেতর ও বাইরের অংশ। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে আরবি হরফের লেখা রয়েছে, তবে  অস্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরেই মসজিদটি কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

৫ ফুট প্রশস্থ দেয়ালে মসজিদে রয়েছে ৪টি গম্বুজ, কিন্ত কোনো মিনার নেই। মসজিদের ভেতরে এক সাথে মাত্র ৪০ ও বারান্দায় আরও ১০ জন নামাজ পড়তে পারে। আশপাশের আয়তন ৬ একর। পূর্বে আরো বেশি ছিল তবে অনেকেই সংরক্ষেণের অভাবে দখল করে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মসজিদটি সংস্কারের দাবি জানান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা মনে করেন প্রাচীন ঐতিহ্য এ মসজিদটি সংস্কার ও প্রসস্থ এর পাশাপাশি যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে প্রাচীন এ মসজিদটি ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

মসজিদের ইমাম কারী মো. ফজলুল হক জানান, আমি ৪৪ বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করে আসছি। আমার জানামতে বাদশা আলাউদ্দিন হোসাইন শাহর আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দেশের অনেক স্থান থেকে লোকজন মসজিদটি দেখতে এখানে আসে। তবে মসজিদটি সংষ্কার করতে পারলে আরও বেশি আকষর্ণীয় করে তোলা সম্ভব হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর রহমান শাহ জানান, মুঘল সম্রাটের আমলে তৈরি মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক পর্যাটক আসে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি মসজিদটি সংষ্কার করে তোলতে পারলে আরো বেশি পর্যাটক আসবে।

খাদেম শাহ আব্দুল শহীদ জানান, মসজিদে মাত্র ৪০ জন এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। অনেক সময় দেখা যায় লোকজন জায়গার অভাবে নামাজ পড়তে পারে না। অনেক সময় মহিলারাও আসে, তাদের কোন এবাদতের ব্যবস্থা নাই। যদি মসজিদটি সংস্কার করা হয় তাহলে অনেক অনেক দর্শনার্থীরা আসবে।

মাদারীপুর থেকে আসা ইমরান মাহবুব জানান, আমি ইউটিউবের মাধ্যমে এ মসজিদের বিষয়টি জানতে পেরে স্বপরিবারে দেখতে আসছি। অনেক সুন্দর প্রাচীন আমলে তৈরি মসজিদটি অনেক সুন্দর হয়েছে। এটি প্রাচীন নিদর্শন বলেও তিনি জানান। মসজিদটির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

জামালপুর থেকে আসা আমিনুল ইসলাম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, দেশে প্রাচীন আমলের তৈরি স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে। এগুলো সংরক্ষণ করতে না পারলে আমাদের ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাবে। আমি আশাবাদী সরকার এগুলো সংরক্ষণ করে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে ধরে রাখবে।

মাধবপুর থেকে আসা মারুফ মিয়া জানান, ইউটিউবে অনেকবার মসজিদটি দেখছি। দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। দেখতে খুবই সুন্দর। মসজিদটি সংস্কার করতে পারলে আরও বেশি বেশি পর্যটক আসবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলে মসজিদে আরো বেশি বেশি লোকজন আসবে। এ জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে।

স্থানীয় রাজিউড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদরুল করিম দুলাল জানান, দেশের ইতিহাস টানলে অনেক স্থানেই এ ধরনের মসজিদ নেই। হাতেগোনা হয়েকটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। এখানে মসজিদে নামাজ পড়তে মসুল্লিদের অনেক কষ্ট হয়। রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভালো নেই। তিনি বলেন একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই যদি দর্শনার্থীর জন্য রাস্তাঘাট করতে না পারি তাহলে এ দুঃখ রাখি কোথায়? তিনি রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।