বাসস
  ০৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২

কালের সাক্ষী লালমনিরহাটে মোগল আমলের নিদাড়িয়া মসজিদ

লালমনিরহাটে মোগল আমলের নিদাড়িয়া মসজিদ। ছবি: বাসস 

॥ বিপুল ইসলাম ॥

লালমনিরহাট, ৯ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : জেলার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন নিদাড়িয়া মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত শিলালিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয় ১১৭৬ হিজরী সনে মোগল সুবেদার মাসুদ খাঁ ও তাঁর পুত্র মনছুর খাঁর তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়। এর নির্মাণ সামগ্রী ও স্থাপত্য রীতিতে মোগল স্থাপত্য শিল্পের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।

নিদাড়িয়া মসজিদটি প্রাচীন এক কক্ষের মসজিদ। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ ফুট। এর অভ্যন্তরে একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে। উপরিভাগে তিনটি গম্বুজ, চার কোণায় চারটি পিলার, সম্মুখে একটি প্রবেশদ্বার ও প্রবেশদ্বারের পাশেই হাতের বা দিকে মসজিদের একটি দোচালা ঘর রয়েছে। এ ঘরটিকে অনেকেই মনে করেন স্টোর রুম বা মসজিদের ইমামের আবাসস্থল। মসজিদের সামনেই এক বিরাট ঈদগাহ মাঠ রয়েছে। মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পূর্ব কোণে একটি কবরস্থান রয়েছে। মসজিদের উত্তর দিকে ২০১৯ সালে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে।

মসজিদের বাম পাশে একটি কবর আছে। কবরটি সর্ম্পকে সঠিক ধারণা পাওয়া না গেলেও অনেকেই মনে করেন কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সুবেদার মনছুর খাঁর। এ মসজিদের ১০ একর ৫৬ শতক জমি রয়েছে। এ জমি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে মসজিদে প্রতি বছর ওয়াজ মাহফিল এর আয়োজন করা হয়।

নিদাড়িয়া মসজিদের খাদেম মোঃ আনসার আলী বাসস'কে বলেন, জনশ্রুতি আছে দাড়িকে কেন্দ্র করেই মূলত মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। বাবার কাছে শুনেছি, সুবেদার মনছুর খাঁর দাড়ি ছিলো না। তিনি আল্লাহর কাছে মানত করেছিলেন তার দাড়ি গজালে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। তার এই মানত করার কিছু দিন পর তার মুখে আল্লাহ তাআলার রহমতে কয়েকটি দাড়ি গজায়। এতে মনছুর খাঁ আল্লাহ’র প্রতি সন্তষ্টি প্রকাশ করে ১১৭৬ হিজরী সনে তিনটি দাড়ি গজানোর চেতনায় তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন ।

সেই সাথে মসজিদের নামে আরো ১০ একর ৫৬ শতক জমি দান করেন। পরে সুবেদার মনছুর খাঁর দাড়িহীনতার কারণে ফারসি ভাষায় মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘নিদাড়িয়া মসজিদ’ ।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, মসজিদের পাশে থাকা বাঁধানো কবরটি সুবেদার মনছুর খাঁর। সেখানে স্থানীয় মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

মুঘল আমলে নির্মিত এ মসজিদটি রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের বড়বাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিশামত নগরবন্দ মৌজায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

প্রাচীন এ মসজিদটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ছুটে আসেন। তারা মসজিদে এসে নামাজ পড়েন ও দোয়া করেন।

কালের বিবর্তনে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে জেলার অন্যতম মুঘল স্থাপত্যের এই নিদর্শন আজ অনেকটাই নষ্ট হওয়ার পথে। মসজিদটির প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মসজিদের জমি জমা সংক্রান্ত বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বাসস'কে বলেন, ঐতিহাসিক নিদাড়িয়া মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তালিকাভুক্ত একটি মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদের সংস্কার ও বিরাজমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।