শিরোনাম
রোস্তম আলী
মন্ডলদিনাজপুর, ১২ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : পুনর্ভবার বুকে জেগে ওঠা চরের জমিতে ইরি ও বোরো চাষ করে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন উপকুলবর্তী গ্রামের চাষিরা। একসময় যাদের অনেক জমিজমা ছিলো, কিন্তু নদী ভাঙনে কালক্রমে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তারা ভূমিহীন। তাই নদীর বুকে জেগে ওঠা চরই তাদের একমাত্র অবলম্বন।
জেলার কাহারোল উপজেলার কান্তজি গ্রামে একসময় নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গিয়েছিল আবাদী জমি। এখন নদীর বুক জুড়ে চলছে কৃষিকাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কান্তজির মন্দির-সংলগ্ন কান্তজির গ্রামে পানি শুকিয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে চাষিরা কাজ করছেন। কেউ জমিতে জৈব সার দিচ্ছেন, কেউ বালু সমান করছেন। নারী শ্রমিকরা দল বেঁধে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। নদীতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। বেশির ভাগ অংশে ধান রোপণ হচ্ছে।
কিছু অংশে পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও গম চাষ করা হয়েছে। চাষিরা জানান, এসব ফসল দ্রুত তোলা যাবে।
বর্ষায় নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে নদী তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি। শুকনো নদীর বুকেই তাই এখন চাষিরা নিজেদের ভাগ্য খুঁজছেন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে নদীর পানি কমে গেলে চাষিরা বিভিন্ন ফসল চাষ শুরু করেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়। মে মাসে ধান কেটে ঘরে তোলা যাবে বলে জানান চাষিরা।
কাহারোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বাসসকে বলেন, নদীর চরে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ইরি ও বোরো ধানের চারা রোপণ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে এবছর জেলায় ইরি ও বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এই চাষাবাদ জাতীয় উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করবে।
এলাকার প্রান্তিক ও দরিদ্র চাষিরা জানান, নদীর চরে পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করে তাদের পরিবারের চাহিদা পূরণ হবে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় নদীর চরে ধান চাষে অধিক ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতেই আমাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। বালুর মধ্যে চারা রোপণ করছি। বালু থেকেই ফসল ঘরে তুলবো।”
কৃষক সাদেক আলী বলেন, ‘একসময় আমাদের অনেক জমি ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনে তা বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমরা ভূমিহীন। তাই ঝুঁকি নিয়ে নদীর চরে ফসল চাষ করছি। চরে জমির চারদিক উঁচু করে আইল তৈরি করে ধান রোপণ করেছি। প্রতি একর জমিতে ৬০ থেকে ৬৫ মণ ধান হয়। নদীর চরের জমিতে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না, নদীর পানিতেই সেচের কাজ হয়। ফলে এসব চর জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়।’
আরেক চাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। এ থেকে পরিবারের সারাবছরের খাদ্য চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করছি।’
চাষিরা জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ গ্রহণ করায় এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক মৌসুম সঠিকভাবে ফসল চাষ করলে সারা বছরের চাহিদা পূর্ণ হয়।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নদীর পানি কমে যায়। এ সময়ে পুনর্ভবা নদীসহ বিভিন্ন চরে ফসল চাষ করেন চাষিরা। আমরা তাদের চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা অনাবাদি ও পতিত চরের জমি ব্যবহার করতে পারেন। এটি দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশে খাদ্য উৎপাদনে সহযোগিতায় কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে।