শিরোনাম
/রোস্তম আলী মন্ডল/
দিনাজপুর, ১৬ মার্চ ২০২৫(বাসস) : জেলার সদর উপজেলার আত্রাই নদীর মোহনপুর রাবার ড্যাম ও চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে সাঁইতাড়া রাবার ড্যামের মেরামত সম্পন্ন হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের দুর্ভোগ কমেছে। ড্যাম মেরামতের ফলে দুটি পয়েন্টে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় এখন পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষকরা বোরো চাষের জমিতে নির্বিঘ্নে সেচ দিতে পারছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া এ প্রসঙ্গে বাসসকে বলেন, দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে দু'টি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালে প্রথম চিরিরবন্দর উপজেলার কাঁকড়া নদীতে সাঁইতাড়া এলাকায় একটি ড্যাম নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১৪ সালে সদর উপজেলার মোহনপুর এলাকায় আত্রাই নদীতে আরেকটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মোহনপুর রাবার ড্যামটিতে ছিদ্র হওয়ায় পানি ধরে রাখা যাচ্ছিল না। অন্যদিকে কাঁকড়া নদীর খননকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় নদীতে পানি থাকছে না।
ফলে রাবার ড্যাম দু'টি অকেজো হয়েছিলো। এতে কৃষকরা গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে শুরু করেন, যার সেচ খরচ দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় কৃষকদের আর্থিক দুর্ভোগ বেড়ে গিয়েছিল।
দিনাজপুর এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদার রহমান জানান, দিনাজপুর সদর উপজেলার আত্রাই নদীতে, ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পানি মজুত রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যাম নির্মিত হয়। অন্যদিকে কাঁকড়া নদীর উপর ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সাঁইতাড়া রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়।
জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর তীরবর্তী এলাকা এবং মোহনপুর ও সাঁইতাড়া রাবার ড্যাম এলাকার স্থানীয় কৃষকরা সেচের পানি পাচ্ছিলেন না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বোরো মৌসুমে মোহনপুর রাবার ড্যামটিতে সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিবার চালু করার সময় দেখা যায় ড্যামের ব্যাগে ছিদ্র আছে। কর্তৃপক্ষ এর স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা না করায় প্রতিবছর একই সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে কাঁকড়া নদীর খননকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় পানি আত্রাই নদীর দিকে নেমে যায়। ফলে কাঁকড়া নদীর উভয় পাড়ের কৃষকরা পানি থেকে বঞ্চিত হন।
সম্প্রতি এ ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এলজিইডি বিভাগ গুরুত্ব দিয়ে রাবার ড্যাম দু'টির মেরামতের কাজ শুরু করে। এবছর দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাবার ড্যাম দু'টি মেরামত করা হয়েছে। গত ১৩ মার্চ থেকে রাবার ড্যাম দু'টির পানি ধরে রাখতে ফোলানো শুরু হয়। গতকাল শনিবার দুপুর ১২ টা থেকে রাবার ড্যামে ধরে রাখা পানি কৃষকেরা সেচ কাজে নির্বিঘ্ন ভাবে ব্যবহার করতে পারছে।
জেলার চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলার দুই কৃষি কর্মকর্তা জানান, এই দু'টি উপজেলার আড়াই থেকে তিন হাজার হেক্টর জমি রাবার ড্যামের সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে।
কৃষকরা মোহনপুর ও কাঁকড়া নদী থেকে শ্যালো মেশিন বা বিএডিসি এলএলপির সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে স্বল্প খরচে তাদের জমিতে পানি নিতে পারছেন। নদীগুলোর উভয় পাড়ে ৫৩টি এলএলপি পাম্প, ১৪টি শ্যালো মেশিন ও ২১টি বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা রয়েছে। নদী দু'টির রাবার ড্যাম ফোলানো শুরু হওয়ায় সেচের পানির সংকট কেটে যাবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নদী থেকে সেচের পানি তুলতে কোনো সমস্যা হবে না।
দিনাজপুর এলজিইডির রাবার ড্যাম তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী প্রকৌশলী ফাওজুল কবীর বলেন, রাবার ড্যাম দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড্যামের দু'টি ব্যাগ ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। তা প্রাথমিক ভাবে মেরামত করে মোহনপুর রাবার ড্যামের পানি দিয়ে ফোলানো হচ্ছে। আশা করছি এখন আর সেচের পানির সমস্যা হবে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে নতুন ব্যাগের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। নতুন ব্যাগ এলে স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।