বাসস
  ১৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৪৮
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১৩:০৯

নগদ মুনাফা লাভের আশায় তামাক চাষেই স্বচ্ছন্দ কৃষক, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

নেত্রকোনায় তামাক চাষের কারণে স্থাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। ছবি : বাসস

।। তানভীর হায়াত খান।।

নেত্রকোনা, ১৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : নগদ মুনাফা লাভের আশায় তামাক চাষেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন এই জেলার কৃষকরা। তামাক চাষে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা জানলেও আমলে নেন না তারা।  তাদের যুক্তি, বছরের পর বছর ধরে বাপ-দাদারা তামাক চাষ করেছে। তারাও করেন। ঝুঁকি  কোথায়।  

সরেজমিনে জেলার কেন্দুয়া ও বারহাট্রা উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে তামাক চাষের বিস্তার। বিশেষ করে চিরাং, দুল্লী, বৈরাটী ও ছিলিমপুরের কৃষকরা ধানের তুলনায় তামাক চাষেই বেশি লাভ দেখতে পাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বাপ-দাদার আমল থেকে তারা তামাক চাষ করে আসছেন। তাদেরতো কোনও ক্ষতি হয় নি।

তামাক চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধান চাষের চেয়ে তামাক চাষে আয় বেশি। এখানে তামাক কোম্পানি অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে তাই উৎপাদনের পর বিক্রির জন্যে বসে থাকতে হয় না। কোম্পানির লোক এসে তামাক নিয়ে যায়। তাই চাষিদের জন্য তামাক চাষই সহজ। তামাক চাষের ব্যাপারে কৃষি অফিস থেকেও তাদের কোনরকম সতর্ক করা হয়নি বলে তারা জানান। 

ভালো দামের আশায় কৃষকরা তামাক চাষে মনোযোগী হওয়ায় ফসলি জমির উর্বরতা কমছে, কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।  কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। 

নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক  মোহাম্মদ আব্দুল গণি বাসসকে বলেন, ‘তামাক চাষ শুধু জমির উর্বরতা কমায় না, এটি কৃষকদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে, দীর্ঘদিন তামাক চাষের সংস্পর্শে থাকার ফলে শ্বাসকষ্ট ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়’।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘নেত্রকোনায় বর্তমানে ৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এতে চাষিরা ও স্থানীয়রা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। শিগগিরই তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করা হবে।’

পরিবেশকর্মী মো.অহিদুর রহমান বলেন, ‘এ জেলায় অনেক আগে তামাক উৎপাদন হতো। মাঝখানে  তামাক চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নগদ লাভের আশায় সম্প্রতি কৃষকরা আবারো এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে তারা সাময়িক আর্থিক সুবিধা পেলেও  দীর্ঘ মেয়াদে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।’ 

তিনি বলেন, তামাক চাষের কারণে শিশুদের বিভিন্ন রোগ দেখা দেবে। নারীরা বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। হৃদরোগ ও ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তামাক চাষের ফলে আমাদের চারপাশের পরিবেশেও খারাপ প্রভাব পড়বে। মাছের উৎপাদন ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। 

তিনি শীতকালে তামাক চাষ না করে শীতকালিন সবজি উৎপাদন করে কৃষকদের তামাক চাষের ভয়াবহতা থেকে রক্ষার আহ্বান জানান।
‘একদিকে অর্থনৈতিক লাভ, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ এই দোলাচলে রয়েছে নেত্রকোনার তামাক চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ যদি যথাযথ উদ্যোগ নেয়, তাহলে তামাক চাষ কমিয়ে বিকল্প ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হতে পারেন কৃষকরা।