বাসস
  ১৬ মার্চ ২০২৫, ২০:২৮

সাতক্ষীরায় বিপ্লব কবীর হত্যার অভিযোগে সাবেক এসপিসহ ২২ জনের নামে মামলা দায়ের

সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও সাবেক এমপি ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ। কোলাজ

সাতক্ষীরা, ১৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিএনপি নেতা এস এম বিপ্লব কবীরকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও সাবেক এমপি ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আজ রোববার সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলি আদালত-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই মো. জাহাঙ্গীর।

আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিদুল হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে এজাহার হিসেবে গণ্য করে আদালতকে জ্ঞাত করার জন্য তালা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

নিহত বিপ্লব কবীর তালা উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি উপজেলার দোহার গ্রামের মৃত শেখ শের আলীর ছেলে। 

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক (ডিবি) ওসি এ কে এম আজমল হুদা, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল হাসিবুর রহমান, ফারুক চৌধুরী, রাসেল মাহমুদ, শিকদার মনিরুজ্জামান, তালা থানার সাবেক ওসি আবু বকর সিদ্দিক, এস আই আকরাম হোসেন, এএসআই গোলাম সরোয়ার, জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম মুক্তি, মাঝিয়াড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা শেখ আবু জাফর, দোহার গ্রামের যুবলীগ নেতা শাহিন শেখ, জালালপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আমিরুল শেখ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুহুল আমিন শেখ মিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আমজাদ আলী, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল সরদার, যুবলীগ নেতা আক্তারুল সরদার, জেলা ওয়াকার্স পার্টির নেতা মহিবুল্লাহ মোড়ল, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেখ আনারুল ইসলাম ও জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাম প্রসাদ দাশ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, তালা শালিখা ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বিএনপি নেতা বিপ্লব কবীরের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে বিপ্লব বিষয়টি জানতে পেরে রাতে নিজ বাড়িতে না থেকে এই মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ছবেদ আলী মোড়লের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতেন।

২০১৪ সালের ১৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে উক্ত আসামিরা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘবদ্ধ হয়ে পিস্তল, কাটা রাইফেল, বন্দুক, রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও লোহার রডসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছবেদ আলী মোড়লের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা ছবেদ আলীর ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে এতে তিনি বাধা দেন। বাধা দেয়ায় তার হাতের কনুইতে মামলার ১৩ নম্বর আসামি শাহীন শেখ পিস্তল দিয়ে গুলি করে।  এ সময় অন্য আসামিরা লোহার রড ও রাম দা দিয়ে আঘাত করে তার দুই পা ভেঙে দেয়। এতে তার স্ত্রী রিজিয়া বাধা দিতে আসলে আসামিরা তাকেও মারপিট করে আহত করেন। এর কিছুদিন পর রিজিয়া মারা যান। 

আসামিরা ঘরের দরজা ভেঙে উক্ত ভিকটিম বিপ্লবকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে। পরে তারা লোহার রড দিয়ে তার মাথার পিছনে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লুটিয়ে পড়ার পর আসামিরা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে বিপ্লবকে টেনে হিঁচড়ে আটুলিয়ার দিকে নিয়ে যান। 

মামলার আর্জিতে বলা হয়, সেখানে জেলার সাবেক এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের নির্দেশে পুলিশের গাড়ি গিয়ে ভিকটিমকে তুলে নিয়ে ইসলামকাটির দিকে নিয়ে যায়। মামলার বাদী সাক্ষীদের নিয়ে তার ভাইকে খুঁজতে বের হন। এরপর তারা পর পর দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান। তখন বাদী বুঝতে পারেন যে তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরে বাদীসহ মামলার সাক্ষী আশরাফুল, মশিয়ার ও আমিরুল মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখেন পুলিশের একটি গাড়ি থেকে ভিকটিমের চোখ বেঁধে নিচে নামানো হয়। সেখানে তার ভাইয়ের মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, মরদেহ হস্তান্তরের পর তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর এ মামলার বাদীসহ তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। সে কারণে তারা এই হত্যার ব্যাপারে ওই সময়ে কোথাও কোন অভিযোগ দিতে সাহস পাননি। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর মামলা করার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি আজ বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. আবু সাঈদ রাজা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আদালতকে জ্ঞাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।