শিরোনাম
রোস্তম আলী মন্ডল
দিনাজপুর, ১৭ মার্চ, ২০২৫(বাসস) : জেলার বোচাগঞ্জে লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষে সাফল্যের খবরের পর এবার একই জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় চিনা বাদামের সাথী ফসল হিসেবে কাউন চাষে সাফল্যের খবরে আশা জাগছে কৃষকদের মনে। সাথী ফসল চাষের মাধ্যমে একই জমিতে কম সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যা প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্য বদলের বার্তা দিচ্ছে।
বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের মুরারিপুর গ্রামের রিয়াজ উদ্দীনের পুত্র তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. রেজানুল ইসলাম রেজা (৩২) গত বছর উঁচু জমিতে বাদাম চাষের পাশাপাশি কাউন চাষ করে সফল হন। এবছর তিনি আরো বেশি জমিতে কাউন চাষ করে ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।
রেজানুর ইসলাম বাসসকে জানান, তিনি প্রথম ইউটিউব ও বিভিন্ন গবেষণা জার্নালের মাধ্যমে কাউন চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এর কাছে কাউন চাষের বিষয়ে পরামর্শ নেন।
গত অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে জমিতে তিনি প্রথম চীনা বাদামের বীজ বপন করেন। বাদাম বোনার ২০ দিন পর একই জমিতে তিনি কাউনের বীজ ছিটিয়ে দেন। বাদামের সাথে কাউনের বীজ একই সাথে বাড়তে থাকে। ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে কাউন পাকতে শুরু করেছে। এখন একই ক্ষেতে কাউনের গাছের নিচে বাদাম এবং উপরে কাউনের শীষ দৃশ্যমান হয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষেতের কাউন ঘরে তুলতে পারবেন বলে জানালেন রেজা। কাউন তোলা হলে বাদামের ভালো ফলন নিশ্চিত করতে বাদামের উপযোগী পরিচর্যা শুরু করবেন বলে জানালেন এই তরুণ কৃষক ।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)-এর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক শ্রীপতি সিকদার বলেন, ‘এক সময় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে প্রচুর কাউন চাষ হতো। এটি আগে গরিবের প্রধান খাদ্য ছিলো। মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনের ফলে, এখন আর তেমন ভাবে কাউন চাষ হয় না। তবে বর্তমান বাজারে কাউনের চালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কাউন থেকে যে চাল উৎপাদিত হয় এই চাল দিয়ে উন্নতমানের পায়েস ও ক্ষীর রান্না করা যায়। কাউনের চালের ক্ষীর এখন নামি-দামি রেস্টুরেন্টগুলোতে উন্নত মানের খাবার হিসেবে বিক্রি করা হয়।’
বাসসের সাথে আলাপকালে অধ্যাপক শ্রীপতি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পতিত জমির পরিমাণ কমছে। আবার কৃষকেরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই জমিতে একসাথে দুটো ফসলের চাষ করছে। কৃষি ভিত্তিক এই জেলায় আম ও লিচুর বাগানে যেমন ফাঁকা জায়গায় মিষ্টি কুমড়া, লাউসহ সবজি জাতীয় ফসলের চাষ হচ্ছে। তেমনি ধানের ক্ষেতে সরিষা চাষ হচ্ছে। একইভাবে তরুণ উদ্যোক্তা রেজা বাদাম ক্ষেতে কাউন চাষ করে সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, সাথী ফসল চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে প্রান্তিক কৃষকরা অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারবেন। তাই কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গভীর গবেষণা প্রয়োজন। যাতে কৃষকদের এ ধরনের উদ্যোগকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা যায়।
তিনি আরো জানান, হাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফসল চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের কাউনের উৎপাদন ও চাষ সম্পর্কে শেখানো হয়েছে। মাঠ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থী কাউন চাষ সম্পর্কে অবগত আছে। মাঠে কাউন চাষ করে অনেকে সফলও হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মুরারিপুর গ্রামের যুবক রেজানুল ইসলাম বাদামের ক্ষেতে কাউনের চাষ করে সফল হয়েছেন। আমি তার জমি পরিদর্শন করেছি। রেজা বাদামের সাথী ফসল হিসেবে কাউন চাষ করে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এভাবে তরুণ প্রজন্ম কৃষি কাজে আগ্রহ নিয়ে ব্যতিক্রম ধরনের ফসল উৎপাদনে এগিয়ে আসলে কৃষিতে নবজাগরণ হবে।
শিবরামপুর ইউনিয়নের কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পুনরায় কাউন চাষে সাফল্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা রেজা। তিনি উঁচু জমিতে বাদামের সাথে কাউন চাষ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। এখন বাজারে ১০০ টাকা কেজির উপরে কাউনের চাল বিক্রি হয়। যুবক রেজার উৎপাদিত কাউন বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বাসসকে বলেন, তরুণ সমাজ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, একই জমিতে একসাথে দুই ফসল চাষ করে জেলার অনেক উদ্যোক্তা সফল হয়েছে। এসব কৃষি উদ্যোক্তাদের কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলায় প্রচুর আম ও লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানের মধ্যে সাথী ফসল চাষে বাগান মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামীতে কৃষকরা যাতে সাথী ফসল চাষে আরো সফল হতে পারেন সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।