শিরোনাম
নারায়ণগঞ্জ, ১৭মার্চ, ২০২৫ (বাসস): বিকেল হতেই একদল তরুণ-তরুণী চলে আসে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নেমে পড়ে ইফতার আয়োজনে। কেউ করে ঝাড়ামোছার কাজ, কেউ পাটি বিছায়, কেউ আবার খাবার পরিবেশনের কাজ করেন।
অসহায় রোজাদার ও পথচারী মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে বসে যান খাবার সামনে নিয়ে। ইফতারের আগে মোনাজাতে অংশ নেন উপস্থিত সবাই। এরপর শুরু হয় ইফতার। ইফতারে থাকে সরবত, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, মুড়ি ফল।
৪ বছর ধরে রমজানের পুরো মাস জুড়ে এমন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীরা। নারায়ণগঞ্জের জামতলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মাসব্যাপী এ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন মুক্ততরী নামক একটি সামাজিক সংগঠন। তারা প্রতিদিন ১০০ মানুষের ইফতার আয়োজন করেন। তাদের এ মহতী কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
মুক্ততরী সংগঠনের সদস্য পুস্পিতা বলেন, ২০১৯ সাল থেকে পথশিশুদের সহযোগিতা ও সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মুক্ততরীর পথযাত্রা শুরু হয়৷ এরপর করোনাকালীন সময়ে প্রায় দুইমাস ব্যাপী পঞ্চতৃপ্তি নামক একটি আয়োজন করি। যেখানে ৫ টাকার বিনিময়ে দুস্থ মানুষকে ভরপেট খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলাম। এছাড়াও মানুষদের সহায়তা মূলক কাজ করে থাকি আমরা। মানুষকে ইফতার করানোর মাসব্যাপী এমন একটা আয়োজন নারায়ণগঞ্জ শহরে আমরা আগে দেখিনি। সারাদিন রোজা রাখার পর মানুষকে একবেলা ভালো খাবার খাওয়ানোর উদ্দেশ্যই আমাদের এ আয়োজন। আমাদের এখানে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আর্থিক সহায়তা করে। কিংবা ইফতার কিনে দিয়ে যায়। আমরা এ দুইভাবে করা সহয়তাই গ্রহণ করে থাকি। আমাদের এখানে ধনী-গরিব সবাইকে ইফতারে স্বাগতম, তাই আমাদের এ আয়োজনের নাম মুক্ত ইফতার।
মুক্ততরীতে এক দিনের ইফতারের আয়োজক সুমন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, বাড়ির বড়রা প্রতিবেশীদের বাসায় ইফতার পাঠাতেন। গরিব মানুষদের খাবার দিতেন কিন্তু এখন আর সেইভাবে আয়োজন করার সময় অনেকেরই নাই। কিন্তু মানুষকে খাওয়ানোর ইচ্ছা অনেকের থাকে। মুক্ততরীর মাধ্যমে মানুষের সেই ইচ্ছেটা সহজে পূরণ হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় একশ মানুষকে ওরা ইফতার করায়। যেখানে আমিও একদিন ইফতার আয়োজনে সহায়তা করি।
৮ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ইফতারের এ আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী কাকলী। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন এখানে ইফতার আয়োজন করি। যারা এখানে ইফতার করেন তাদের আমরা মেহমান বলি। মেহমানদের ইফতার শেষে আমরা নিজেরা ইফতার করে থাকি। এরপর পরদিন আবার কি কি আয়োজনে থাকবে সেই পরিকল্পনা করি। আমার যেহেতু সন্তান আছে, আমি নিয়মিত আসতে পারি না। তবে আসার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে যেই মেহমানরা আসেন, তারা প্রায় নিয়মিত। অনেকেই আছেন যারা ৪ বছর যাবৎ এখানে ইফতার করছেন।
ফতুল্লার ইসদাইর নিবাসী মনিরা খাতুন। তিনি প্রায় নিয়মিত এখানে ইফতার করেন। তিনি বলেন, সারাদিন রোজা রাইখা একটু ভালো কিছু খাইয়া রোজা ভাঙ্গনের আশায় এনে আই। সবাই অনেক ভালো, খাওনও দেয় ভালো।
মুক্ততরী সংগঠনের পরিচালক রুবাইদ হাসান সায়মন বলেন, 'আমরাই আমাদের শক্তি' এ বিশ্বাসেই আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। কারণ এতো মানুষের ইফতারে আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা খরচ হয়। আমরা যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে নিজেরা চাঁদা দেই। এছাড়াও যারা ইফতার করাতে চান এ মানুষদের, সেই সব শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহয়তায় চলছে আমাদের এ ইফতার আয়োজন। আমরা স্বেচ্ছাসেবীরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী, এছাড়াও অন্য পেশার যুক্ত রয়েছি। আমরা আগামী বছর গুলোতে এ আয়োজন আরো বৃহৎ পরিসরে করার পরিকল্পনা করছি।