শিরোনাম
॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ১৮ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নদীপথে ১৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ডেঞ্জার জোন মৌসুম। এসময়টাতে এখানকার নদীপথ ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুূর্যোগে অশান্ত হয়ে উঠার কারণে এ মৌসুমে উপকূলের এ নদীর বিশাল অংশে আগামী সাত মাস ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
এসময় এ অঞ্চলে কেবল বে-ক্রসিং সনদ (সমুদ্রে চলাচলযোগ্য নৌযান) ছাড়া অন্য কোনো নৌযান চলতে পারবে না এমন সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
যে কারণে মেঘনা, তেঁতুলিয়া, ইলিশা, কালাবাদর ও বেতুয়ার মতো উত্তাল নদীগুলোতে ঝড়ের এ মৌসুমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ'র আওতাধীন নির্ভরযোগ্য নৌযান সি-ট্রাক চলাচলের কথা। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সি-ট্রাকগুলোর কয়েকটি ডকইয়ার্ডে মেরামত করা হচ্ছে। ফলে সি-ট্রাক স্বল্পতার সুযোগে একশ্রেণীর অসাধুচক্র নদীতে অবৈধ নৌযানের ব্যবসা চালাচ্ছে।
সরেজমিন ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে এলাকায় দেখা গেছে, ওই ঘাট থেকে ট্রলার বোঝাই যাত্রী নিয়ে লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন রুটে নৌযানগুলো চলাচল করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে উত্তাল মেঘনা। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী আইনের তোয়াক্কা না করে এসব নৌযানগুলোতে যাত্রী পারাপারের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-ইলিশা-লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে সরকারী সি-ট্রাক খিজির-৮ অনেকদিন ডকইয়ার্ডে থাকার পর এখন সচল হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন বিকল থাকার পর ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাটে খিজির-৫ চলাচলের জন্য ফের প্রস্তুত করা হয়েছে। ভোলার মনপুরা-তজুমদ্দিন রুটে সি-ট্রাক খুব শীঘ্রই চলাচল করতে পারে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিএ'র ভোলা জেলার সহকারী পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) রিয়াদ হোসেন বাসস'কে বলেন, ডেঞ্জার মৌসুমের কারণে ১৪ মার্চ রাত ১২ টার পর থেকেই এমভি শ্রেণীর সকল ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসময় ট্রলার চলাচলও বন্ধ থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষিত এ ডেঞ্জার মৌসুমে মেঘনাসহ সমুদ্র এলাকায় শুধু বে ক্রসিং সনদ ছাড়া অন্য কোনো নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর সমুদ্র অধিদপ্তরের জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপকূলীয় এলাকা ভোলা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে ঝুঁকি নিয়ে চলে থাকে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান।
যে কারণে ঝড়সহ প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন উপকূলের হাজারো যাত্রী। যদিও এমন ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছেন বলে দাবি করছেন।
তথ্যমতে, ডেঞ্জার মৌসুমে বরিশাল-ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন নৌ-পথে কয়েকশ স্পিডবোট ও ট্রলার অবৈধভাবে চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিএ বলছে, স্পিডবোট চলাচলে কোনো বৈধতা নেই। এরপরও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জের স্রোতস্বিনী নদীতে ছুটে চলে স্পিডবোট।
সূত্রমতে, ভোলার পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলার বাউসিয়া থেকে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত মেহেন্দীগঞ্জের লালখারাবাদ ও দাতপুর চলাচল করে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এছাড়া হিজলার হরিণাথপুর থেকে ট্রলারযোগে মেঘনা পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরের ঘোসাইরহাটসংলগ্ন আবুপুরে পৌঁছায় এসমস্ত ট্রলারগুলো।
একইভাবে উপকূলীয় এলাকা ভোলার মনপুরার সাকুচিয়া জনতা ঘাট থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়ায় ছোট ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আকৃতির লঞ্চ চলাচল করে প্রতিনিয়ত। ভোলার মনপুরার রিজিরখান থেকে নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত ছোট লঞ্চ চলাচল করে অশান্ত এ মৌসুমেও।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বাসস'কে বলেন, অশান্ত এ মৌসুমে ১৫ মার্চ থেকে সাত মাস এমভি শ্রেণীর ছোট লঞ্চ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সমুদ্র নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকায় নিয়ম অনুযায়ী বে-ক্রসিং সনদযুক্ত সি-ট্রাক চলবে। ডেঞ্জার মৌসুমে উত্তাল মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে যেসব ইঞ্জিনচালিত ট্রলার অবৈধভাবে চলছে, সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবুও এগুলো চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সরকারের কয়েকটি টিম কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।