বাসস
  ২০ মার্চ ২০২৫, ১৫:০৭

বগুড়ার সাদা চিকন সেমাইর কদর বেড়েই চলছে

সাদা চিকন সেমাইর কদর বেড়েই চলছে। ছবি : বাসস

কালাম আজাদ

বগুড়া, ২০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সাদা চিকন সেমাইর  কদর বেড়েই চলছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচেছ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি ঘরে নারীরা চিকন সেমাই তৈরি করে আসছেন। সেমাই তৈরি, রোদে শুকানো এবং মোড়কজাত করার কাজে অন্তত ৪শতাধিক নারী সম্পৃক্ত।

এদিকে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার সাদা চিকন সেমাইয়ের ব্যবসার আশা করছেন কারখানার মালিকরা।তারা বলছেন রোজার এক থেকে দেড়মাস আগ থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে চিকন সেমাইয়ের অর্ডার আসতে শুরু করে। 

পাইকারি সাদা চিকন সেমাই ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ শিল্পকে ঘিরে জেলার আশপাশে বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাই গ্রাম।

আধুনিক মেশিনে মানসম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছ এসব সাদা চিকন  সেমাই। স্থানীয়রা জানান, পাকিস্তান আমলে কারিগররা প্রথম বগুড়ায় চিকন সেমাই তৈরির প্রচলন শুরু করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এ সেমাই তৈরি বিস্তার ঘটে। জানা যায়, বগুড়া জেলা সদর, শাজাহানপুর, গাবতলী, কাহালু উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাইে পল্লী।

এসব উপজেলার গ্রামগুলোতে দুই থেকে আড়াই শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। গত বছর বিভিন্ন কারনে অধিকাংশ কারখানা সাদা চিকন  সেমাই তৈরি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। ফলে চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারেনি। তবে এবছর অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও ময়দার দাম কম। যার ফলে অনেক কারখানাই নতুন করে চালু হয়েছে। রমজানের আগে থেকেই তারা চিকন সেমাই তৈরি শুরু করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সেমাইপল্লী খ্যাত মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, শ্যাওলাকাথিপাড়া, কালসিমাটি, রবিবাড়িয়াসহ আশপাশের প্রায় ৮ থেকে ১০টি গ্রামের নারীদের হাতে প্রায় ৫০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিকন সেমাই। এ এলাকার সাদা চিকন সেমাইর এখন দেশ জুড়ে খ্যাতি।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন পাইকারা নিয়ে যাচ্ছে সাদা চিকন সেমাই।

বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সেমাই কারখানার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন গ্রামগুলোর নারী-পুরুষরা। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাল্লা দিয়ে কাজ চলে সেমাই পল্লীর কারিগরদের। দিনরাত তৈরি করেন চিকন সাদা সেমাই।
প্রতি বছর ঈদের উৎসবকে ঘিরে চিকন সাদা সেমাইয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকেন সেমাই পল্লীর বাসিন্দারা।
তবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় বেকারিগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাপকহারে চিকন সেমাই তৈরি শুরু হয়েছে। ফলে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না চিকন সেমাই পল্লীর নারী কারিগররা।

শ্যাওলাকাথিপাড়া সেমাই কারখানার মালিক মোরশেদা জানান, বহু বছর থেকে  তিনি সেমাই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এবার তিনজন নারী শ্রমিক নিয়ে তিনি সেমাই তৈরি করছেন। তিনি নিজেও ওই শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করছেন। রাতে সেহেরি খাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করেন। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই সেমাই তৈরি হয়ে যায়। 

সেগুলো শুকানোর কাজ শুরু হয়। মোর্শেদা দিনে ৩ থেকে ৪ বস্তা ময়দার সেমাই উৎপাদন করেন। প্রতি খাঁচি (২৫ কেজি) সেমাই ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০টাকায় বিক্রি করেন।

শ্যাওলাকাথিপাড়া গ্রামের আরেক কারখানার মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোজার এক-দেড় মাস আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে সাদা চিকন সেমাইয়ের অর্ডার আসতে শুরু করে। ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় উৎপাদনও বেড়ে যায়।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন চিকন সাদা সেমাই নিতে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে এ সেমাই। এ মৌসুমকে ঘিরে পুরো জেলা জুড়ে কয়েক কোটি টাকার সাদ সেমাইয়ের ব্যবসা।

তিনি আরো জানান, আগে ৮ থেকে ১০টি গ্রামে চিকন সেমাই তৈরি হতো। কিন্তু এখন শহরের বেকারিগুলোতেও সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এজন্য প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। তাই অনেকেই সেমাই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন এ বেজোড়া গ্রামে কয়েকটি পরিবার সেমাই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আমরা প্রতি কেজি সেমাই প্রকার ভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। আর বেকারিতে উৎপাদিত সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আমাদের সেমাইয়ের দাম কম হলেও উৎপাদন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় নয় বলেই শহরের অনেক বড় বড় দোকান আর আমাদের তৈরি সেমাই নিতে চান না।

বগুড়া পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিপার আল-বখতিয়ার বলেন, প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এসব গ্রামে চিকন সেমাই তৈরি শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানে এ শিল্প বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এখানকার তৈরি চিকন সাদা সেমাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। প্রত্যেক বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় রেকর্ড পরিমাণ সেমাই তৈরি করেন কারখানার মালিক-শ্রমিকরা। এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে এ এলাকার সাদা চিকন সেমাই।