বাসস
  ২১ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪০

নওগাঁর স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর দাবী শহরবাসীর

নওগাঁর স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর দাবী শহরবাসীর। ছবি: বাসস

// বাবুল আখতার রানা //

নওগাঁ, ২১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জেলা শহরের স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছে শহরবাসী। শহরের উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধসহ নানারকম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। পাশাপাশি রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। 

জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। তবে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও চালু করতে পারেনি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বর্জ্য পরিশোধনাগারটি। এতে শহরের বর্জ্য ল্যান্ডফিলটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শহরবাসী। 

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রকল্পটির ডিজাইনে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কোনো পদ্ধতি বা যান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর কবে নাগাদ তা চালু করা যাবে তাও বলা সম্ভব নয়। এদিকে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় প্রকল্পের মূল্যবান মেশিন ও  অন্যান্য সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নওগাঁ শহরজুড়ে অপরিকল্পিত ময়লার ভাগাড় আর দুর্গন্ধের সমস্যার সমাধানের জন্য নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে স্যাানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করে নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। দরপত্র বাছাই শেষে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শহরের কোমাইগাড়ী এলাকায় পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের পাশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে কাজটি বুঝে দেয় ওই বছরের আগস্ট মাসে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি চালু করা না যাওয়ায় ল্যান্ডফিলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে এখনও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, আশপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখানে স্থাপিত যন্ত্রগুলোও অকেজো হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হলে শহরের বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

এই ভাগাড়ে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, ল্যান্ডফিল তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পরেও শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছিলো। কিন্তু ৫ আগস্টের পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা বালুডাঙ্গা স্থান থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নিতে চাপ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ আবার কোমাইগাড়ী এলাকায় ল্যান্ডফিলের পাশে ময়লা ফেলতে নির্দেশ দেয়। এখন এখানেই ময়লা ফেলা হচ্ছে।

শহরের স্থানীয় বাসিন্দা আবু রায়হান, আরিফুল হক রনক ও সোহেল রানা বাসস’কে বলেন, দীর্ঘ ২ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি পৌরসভা। প্রতিদিন কাক-পাখিরা ময়লা মুখে নিয়ে বাসা-বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলায় দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি এসব কারণে আত্মীয়-স্বজনও আসতে চায় না বেড়াতে। ময়লার ভাগাড়ের পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষার জন্য আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হলেও আমরা এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে পারি না। এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ অনেকটা কষ্ট করে চলাফেরা করে। এমনও দেখা গেছে, সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় শিশু শিক্ষার্থীরা বমি করে ফেলেছে।

অটোরিক্সা চালক আব্দুস সোবহান বাসস’কে বলেন, যাত্রীরা অটোরিক্সায় উঠতে চায় না। কারণ একটাই দূগর্ন্ধ। কি কারণে জানি না এখনও বর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালু করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। পরিশোধনাগারটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত যতটা দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্পটি চালু করা।

নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশ পরিষদের সভাপতি অ্যাড. ডি.এম আব্দুল বারী বাসস’কে বলেন, ১২ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন জলে যাওয়ার অবস্থা। এদিকে প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এটি শহরবাসীর জন্য এখন গলার কাঁটা। উদ্যোগটি শহরবাসীর জন্য ভালো হলেও শহরের বর্জ্য ল্যান্ডফিলটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাই দ্রুত প্রকল্পটি চালু করা দরকার।

নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বাসস’কে বলেন, প্রকল্পে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার যান্ত্রিক পদ্ধতি নেই। এর জন্য নতুন অবকাঠামো দরকার। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ এই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে তা এই মূহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।