শিরোনাম
/তানভীর হায়াত খান/
নেত্রকোনা, ২৩ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে জেলায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। এ বছর ধানের দাম প্রত্যাশানুযায়ী পাওয়ায় হাওরাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও এসেছে স্বস্তি, কেনাকাটা করে খুশি কৃষকরা।
জেলা শহরের বড় বাজার ক্রেতাদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। সকাল ১০টার পর থেকেই জমজমাট হয়ে যায় পুরো শহর। অনেকে বিকেলের ভিড় এড়াতে সকাল সকাল চলে আসেন কেনাকাটা করতে। রমজান মাস হওয়ায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা নাগাদ উপচে পড়া ভিড় থাকে শহরের বড় বাজার, ছোট বাজার, মোক্তারপাড়া এলাকায়। কেনাকাটা করতে দেরি হয়ে যাওয়ায় ইফতারের সময় ক্রেতা-বিক্রেতাকে একসঙ্গে ইফতার করতেও দেখা যায়।
এ মুহূর্তে জেলার সবচেয়ে ঈদের কেনাকাটার ব্যস্ততম জায়গা হলো বড় বাজার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঈদের কেনাকাটা করতে অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসছেন মানুষ। নেত্রকোনা জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা এমনকি পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলার কিছু উপজেলার মানুষ এখানে আসেন কেনাকাটা করতে।
জেলা শহরের গার্মেন্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লস্কর গার্মেন্টস এর স্বত্বাধিকারী দিদার লস্কর বাসসকে জানান, ‘এ বছর আলহামদুলিল্লাহ অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে পোশাক, সকাল থেকে গভীর রাত নাগাদ ব্যস্ততম সময় পার করছি আমরা, ২০ রমজানের পর থেকে ক্রেতাদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।’
তিনি আরো জানান,এ বছর বাজারে ভারতীয়, পাকিস্তানি পোশাকের আধিপত্য একদমই কম এবং দেশীয় পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দুপুর বারোটার পর ক্রেতাদের ভিড়ে বড় বাজার এলাকায় হাঁটা রীতিমতো কষ্ট হয়ে যায়।
শহরের অন্যতম তৈরি পোশাক বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী সৌরভ চৌধুরী বাসসকে জানান, এবছর দেশীয় পোশাকের বিক্রি বেশি হচ্ছে। ছোট বড় প্রায় সকল বয়সের মানুষের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তাই কয়েকদিন তারা খুবই ব্যস্ত পার করছেন।
একই চিত্র দেখা যায় জুতোর দোকানে, জুয়েলারি, কসমেটিকস এর দোকানগুলোতে। একদরের দোকানগুলোতেও বেশ ভিড় দেখা যায়। তবে বেশি ভিড় হচ্ছে যে দোকানে ক্রেতারা দামদামি করে কেনাকাটা করতে পারেন। ঈদের সময় খুব বেশি যে দামাদামি করতে পারেন তাও কিন্তু না, বিক্রেতারা একটি দাম বললে ক্রেতারা তাদের যৌক্তিক দামে কেনাকাটা করে নিচ্ছেন।
টুপি, আতর, জায়নামাজ বিক্রির দোকানগুলোতেও বেশ ভিড় দেখা যায়। ক্রেতারা বাহারি রংয়ের টুপি, আতর, রুমাল সংগ্রহ করছেন।
শহরের ছোট বাজার এলাকায় খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন টেইলার্সের কারিগররা। রমজানের শুরু থেকে নেয়া প্রচুর অর্ডারের পোশাক বানাতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছেন দর্জিরা।
হাতের বানানো পাঞ্জাবি তৈরির কারিগরদের চোখ এদিক ওদিক করার সময় পর্যন্ত নেই। ঈদের আগে গ্রাহকের হাতে পাঞ্জাবি তুলে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
জেলা শহরের পাঞ্জাবি তৈরির জনপ্রিয় কারিগর মিল্টন মিয়া জানান ,দশ রমজান থেকে পাঞ্জাবি বানানোর অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি,এবছর পাঞ্জাবি বানানোর চাহিদা বেশি,৪০০ পাঞ্জাবির অর্ডার নিয়েছি,চাঁদ রাত এমনকি ঈদের দিন সকাল নাগাদ আমাদের দিনরাত এক করে কাজ করতে হবে।
মুূদি দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। ঈদের ঠিক আগে ভিড় বেশি থাকে, তাই অনেকে বাজার করে নিচ্ছেন এখন।
ঈদের বাজারে যেন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে, নিরাপদে কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য বেশ সতর্ক অবস্থানে আছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উপলক্ষে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, জেলা শহরে ঈদের কেনাকাটায় নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপত্তায় বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জেলা পুলিশ।
তবে জেলা শহরে যানযট বেড়েছে, ট্রাফিক পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন যানযট নিরসনে।
প্রতিদিনই জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে এবং বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।