বাসস
  ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫২

মহান স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রামে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ 

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীস্থ উত্তর কাট্টলীর অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ২৬ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৬ মার্চ ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বুধবার (২৬ মার্চ) নগরীর পাহাড়তলীস্থ উত্তর কাট্টলীস্থ ডিসি পার্কের দক্ষিণ পাশে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ও এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। 

দিনটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেছেন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী। এ সময় অনেককে লাল-সবুজের পোশাক পরে আসতে দেখা গেছে।  

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। দিবসের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন মক্তিযোদ্ধাদের সাথে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহিদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

এরপর  বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসন ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিটি মেয়র বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে সকল শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমরা বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চাই। সকল শ্রেণির নাগরিকদের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সে স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। এ সময় তিনি একাত্তর ও চব্বিশ নিয়ে বির্তকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭১ এবং ২০২৪ নিয়ে কোন প্রকার বির্তকে যাওয়া উচিত হবে না। একটিকে দিয়ে অন্যটি ঢেকে দেওয়া যাবে না। 

এদিকে সকাল ৯টায় নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উদ্বোধন শেষে প্যারেড পরিদর্শন করেন- অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। 

এ সময় সিএমপি ও জেলা পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, বি.এন.সি.সি, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও সরকারী শিশু পরিবার কর্তৃক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। 

কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ ও জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু। 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

মহান স্বাধীনতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাহসিকতার বার্তা দিয়েছে। দেশের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহুর্ত হিসেবে চিহ্নিত, যা দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের জন্য ত্যাগের প্রেরণা দেয়। আর স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের জনগণের সাহস, ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক। এটি দেশের জাতীয় গৌরব ও মুক্তির ইতিহাসকে স্মরণ করার দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বীরাঙ্গানা মা-বোন ও ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ এবং বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করা হাজারও বিপ্লবী বীরদের স্মরণ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, অনেক রক্ত, অশ্রু আর স্বজন হারানোর বেদনায় সিক্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দীর্ঘদিনের শোষিত আর শৃঙ্খলিত বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে অধিকার আদায়ের যে মাটির প্রদীপটি মিটমিট করে জ্বলে উঠেছিল, দীর্ঘ নয় মাসে হাজারো ধারায় স্ফুরিত হয়ে ১৬ই ডিসেম্বর তা রূপ নিয়েছিল আলোর মশালে। আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা, তারপর বিজয়। ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, ৫৫-তে আমাদের পদার্পন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরাই আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর। তোমাদের প্রতি অনুরোধ শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণপূর্বক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে চেষ্টা করবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য করে তুলবে। 

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার নগরীর ষোলশহরস্থ বিপ্লব উদ্যানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র  সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক এম এ হালিম, যুগ্ন আহবায়ক অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, উত্তর জেলা জাসাস সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম টুটুল, যুগ্ন সম্পাদক রাশেদুল আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশেদুল আলম, জসিম উদ্দিন তালুকদার, শাহাদাত হোসাইন, সুমন বাপ্পি ও পলাশসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর : জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আয়োজনে ২৬ মার্চ সকাল ১০ টায় স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নগর জামায়াতের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- নগর নায়েবে আমীর ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আ.জ.ম উবায়েদুল্লাহ, পরিবেশবিদ নজরুল ইসলাম ও নগর সেক্রেটারী অধ্যক্ষ নুরুল আমিন। 

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “ভারত বিরোধিতা আর স্বাধীনতা বিরোধিতা এক বিষয় নয়। আমরা স্বাধীনতা বিরোধী নই, বরং বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা রক্ষা করবো। কারণ, বাংলাদেশ ব্যতীত আমাদের আর কোনো ঠিকানা নেই।”

চুয়েট : চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এ নানা অনুষ্ঠানমালায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর ভাইস চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে একাত্তরের বীর যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরবর্তীতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চুয়েট ক্যাম্পাসে শহীদদের কবরেও পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয় এবং কবর জেয়ারত ও দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ও স্টাফ ওয়েলফেয়ার কমিটির আয়োজনে শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়।

সিভাসু : যথাযোগ্য মর্যাদায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। 

এরপর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সিভাসু পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (বহিরাঙ্গন কার্যক্রম) ও উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. একেএম সাইফুদ্দিন। 

উপাচার্যের পর সিভাসু অফিসার সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়।