বাসস
  ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৮:০৯

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন খ্যাতনামা চীনা ব্যাংকার উ শিয়াওলিং

চীনের খ্যাতিমান ব্যাংকার উ শিয়াওলিং সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ছবি : গভ

হাইনান, চীন, ২৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সাবেক উপ-গভর্নর উ শিয়াওলিং বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে উ শিয়াওলিং অধ্যাপক ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেন। উপ- গভর্নর বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের একজন বড় ভক্ত তিনি’।

তিনি অধ্যাপক ইউনূসের উদ্দেশে বলেন, ‘দারিদ্র্য নির্মূলে আপনার অবদান সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

উ শিয়াওলিং বলেন, যদিও চীন ও বাংলাদেশ দারিদ্রের স্তরে ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে, তবুও অধ্যাপক ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের নীতি চীনা জনগণের জন্য এবং পুরো এশিয়ার উন্নয়নের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে।

সাক্ষাৎকালে উ শিয়াওলিং অধ্যাপক ইউনূসকে তরুণ শিক্ষাবিদ ত্সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঝু সুফেংয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ঝু সুফেং হলেন ত্সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট স্কুলের ডিন এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ইনস্টিটিউটের (টিইউএসডিজি) নির্বাহী পরিচালক।

অধ্যাপক ঝু সুফেং ড. ইউনূসকে ত্সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।

তিনি ইউনূস সেন্টারের সাথে সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

ঝু সুফেং বলেন, ‘বর্তমানে ৪০টি দেশে ১১১টি ইউনুস সেন্টার রয়েছে, যেগুলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আমরা এই নেটওয়ার্কের অংশ হতে চাই’।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি ত্সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে আগ্রহী।

ইউনূস বলেন, ‘আমরা আপনাকে ঢাকায় জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সামাজিক ব্যবসা দিবসে আমন্ত্রণ জানাই’। 

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ এবং তরুণ শক্তিকে একত্রিত করতে কাজ করছি। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণদের রাখা উচিত। আমাদের এমন একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে, যা আত্ম-সংরক্ষণশীল ও আত্ম-প্রবৃদ্ধিশীল। আমাদের একটি বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যা শূন্য-বর্জ্য জীবনধারার উপর ভিত্তি করে থাকবে।’

উ শিয়াওলিং পিপলস ব্যাংক অব চায়না সাবেক উপ-গভর্নরের পাশাপাশি তিনি চীনের অর্থনৈতিক কমিটির উপ-পরিচালক এবং পিবিসি স্কুল অব ফাইন্যান্স, ত্সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও চেয়ারপার্সন।

উ শিয়াওলিং চীনের আর্থিক খাতের উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখেছেন এবং ১৯৯৭ সালের এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ফরেন এক্সচেঞ্জের প্রথম নারী প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর অসাধারণ অর্জন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল থেকে দুবার ‘বিশ্বের ৫০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী’ নির্বাচিত হন এবং ফোর্বস তাঁকে দুবার ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী’ হিসেবে মনোনীত করে।