বাসস
  ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬:১২

ভালো আছেন বেগম খালেদা জিয়া, লন্ডনে পরিবারের সাথে ঈদ করছেন : মির্জা ফখরুল

গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৩০ মার্চ, ২০২৫ ( বাসস) : বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখন ভালো আছেন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে পরিবারের সাথে ঈদ করছেন।’

গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এ কথা জানান। 

তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ উনি (বেগম খালেদা জিয়া) লন্ডনে এখন বেটার আছেন।’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আজ সেখানে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে আট বছর পর উনি এই ঈদ উদযাপন করছেন। ‘দিস ইজ এ গুড থিংক ফর আস।’

কবে আসবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডাম সম্ভবত যতটুকু শুনেছি আমি, ফাইনাল নিশ্চিত না, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন।’

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার কারাগার জীবন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার সিরোসিস হয়েছে জেলখানার মধ্যে। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি যে, কারগারে তাকে স্লু পয়েজিং করা হয়েছে। এটা যদি ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেন উনি বলবেন না। কারণ উনি সেই ধরনের মানুষ না... একবারের জন্য বলবেন না।’

তিনি বলেন, ‘ম্যাডামকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো, সেই ঘরটা ছিলো স্যাঁতস্যাঁতে। সমস্ত দেয়ালের আস্তর ভেঙে ভেঙে পড়ছিলো এবং ইুঁদুর দৌড়াদৌড়ি করতো। এ রকম অবস্থা ফেইস করেছেন আমাদের ম্যাডাম। এর পরেও আমি বেশি বলতে চাই না যে, কাদম্বিনীকে মরিয়া প্রমাণ করতেই হইবে যে, সে মরে নাই। এখন নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে।’

অন্যদিকে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আপনজনকে নিয়ে ঈদের দিনটি একান্তে কাটাচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। আপনারা জানেন, ম্যাডাম উনার বড় ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বাসায় আছেন। ঈদের দিনটি উনি বাসায় আপনজনদের নিয়ে একান্তে কাটাবেন।’

তিনি আরো বলেন, বাসায় দুই পুত্রবধু (ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান) আছেন। তিন নাতনি (ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান)। ম্যাডামকে ঘিরে ঈদের সব আয়োজন তারাই সাজিয়েছেন। কারণ দীর্ঘদিন বছর পর ম্যাডাম তার আপনজনদের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন, এখানে অনেক আবেগ জড়িত।

খালেদা জিয়ার লন্ডনে এটি তৃতীয় ঈদ উদযাপন। এবার দশ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ঈদ পালন করছেন। এর আগে ২০১৭ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে ছেলের বাসায় ঈদুল আজহা উদযাপন করেছিলেন। এরও আগে এক-এগারোর পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় আট বছর পর লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘তিনি এই মুহুর্তে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো আছেন। আগের চাইতে তিনি বলতে পারেন, আলহামদুলিল্লাহ উনি মাচ বেটার।’

ডা. জাহিদ বলেন, ‘ ম্যাডাম দেশবাসীসহ দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও দেশবাসীদের আপনাদের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।'

গত ৮ জানুয়ারি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডন পৌঁছান, হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা হয়।

তিনি এই হাসপাতালে অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডির তত্ত্বাবধায়নে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

এরপর লন্ডন ক্লিনিকে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন থাকবেন খালেদা জিয়া।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদের পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে মায়ের পাশে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানও ছিলেন।

২০১৮ সালে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনার সময়ে তাকে বিশেষ কারামুক্তি দেওয়া হয়। কারাবন্দি অবস্থায় তাঁর চারটি ঈদে কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।