বাসস
  ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৭:২৭
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৭:৩৫

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ, হবে আনন্দ মিছিল ও মেলা

রোববার মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৩০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের বাণিজ্য মেলার পুরনো মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। 

সকাল সাড়ে ৮টায় এই মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নারীদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ডিএনসিসির উদ্যোগে ঢাকা উত্তরের প্রধান ঈদের জামাত এটি। ঈদের জামাতের পর থাকছে ঈদ আনন্দ মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঈদ মেলা।

আজ রোববার মাঠের প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এবারের ঈদ জামাত ও ঈদ মিছিলে লাখো মানুষ সমাগমের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ঈদ জামাতে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি ওজুর ব্যবস্থা, পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই মাঠে একসাথে লক্ষাধিক মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, সরকারের অনেক উপদেষ্টা এই মাঠে ঈদ জামাতে অংশ গ্রহণ করবেন। নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী গত একসপ্তাহ ধরে কাজ করছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পুরো এলাকা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

মোহাম্মদ এজাজ জানান, ঈদের জামাতকে ঘিরে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। মোবাইল ফোন, জায়নামাজ ও ওয়ালেট ছাড়া ভারি কোনো বস্তু সাথে না আনার জন্য মুসল্লীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত শুরু হবে। নারী-পুরুষ সবাই ঈদ জামাতে অংশ নিতে পারবেন। নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ জামাত শেষে সকাল ৯টায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হবে। ঈদ মিছিলটি পুরনো বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হবে। 

তিনি বলেন, ঈদ মিছিলটি হবে বর্ণাঢ্য। মিছিলের সামনে শাহী ঘোড়া ও পেছনে ঘোড়ার গাড়ি থাকবে। ব্যান্ড পার্টি থাকবে, সুলতানি-মোঘল আমলের ইতিহাস সম্বলিত চিত্রকলাও থাকবে। নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন। অন্যান্য ধর্মামাবলম্বীরাও আসবেন। এর মাধ্যমে ঢাকার ৪০০ বছরের ঈদ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা হবে।

ঈদের আনন্দ মিছিলটি ইতিহাসের একটি অংশ হবে বলে জানিয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘এই প্রথম এতো বড় পরিসরে ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এটি ইতিহাসের একটি অংশ হবে। আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, মানিক মিয়া এভিনিউতে ঈদ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ঈদ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। এছাড়াও ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাতাসা থাকবে আপ্যায়নে।

বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেলায় ২০০টির মতো স্টল থাকবে। নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী, খাবার, চটপটির দোকান থাকবে। শিশুদের আনন্দের জন্য নাগরদোলা ও খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এই মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আমাদের ঈদ আনন্দ উৎসব শুধু পুরুষ বা নারীর জন্য নয়, এখানে শিশুদের জন্যও নানা আয়োজন থাকবে। পুরো পরিবার নিয়ে সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন এই ব্যবস্থা থাকছে ডিএনসিসির ঈদ আনন্দ উৎসবে।

প্রস্তুতি পরিদর্শনে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম, সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রমুখ। 

বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় : 

বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদুল ফিতরের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজের জামাতে মূল ইমামতি করবেন ক্বারি গোলাম মোস্তফা। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী।

ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য থাকবে কার্পেট ও নামাজের বিছানা। প্যান্ডেলের ভেতরে দক্ষিণ পাশে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। 

মাঠে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন অংশে ছয়টি ফটক থাকবে। ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের সদস্যরা। প্যান্ডেলের দুই পাশে একসঙ্গে ১০০ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারীর অজু করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পানির ট্যাংক রাখা হবে। ঈদের জামাতের জন্য মোট ১২ পেয়ার সাউন্ড সিস্টেম ও ১০০টি মাইক ব্যবহার করা হবে। জামাতে অংশ নিতে যাঁরা ব্যক্তিগত যানবাহনে আসবেন, তাঁদের গাড়ি রাখা যাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কিংবা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে।

ঈদ আনন্দ মিছিল :  

ঈদের জামাত শেষে বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠ থেকেই শুরু হবে ঈদ আনন্দ মিছিল। মিছিলটি বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লজার সামনে এসে শেষ হবে। আনন্দ মিছিলে বাদ্যবাজনা বাজাবেন ব্যান্ড পার্টি। অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকবে ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তাসংবলিত প্ল্যাকার্ড। আনন্দমিছিলের অগ্রভাগে পাঁচটি সুসজ্জিত ঘোড়া রাখা হবে। মিছিলের সঙ্গে থাকবে ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। পাশাপাশি মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস সংবলিত ১০টি পাপেট শো রাখা হবে। আনন্দ মিছিল থেকে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেওয়া হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আপ্যায়ন : 

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মিছিল গিয়ে শেষ হওয়ার পর সেখানেই হবে সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা ঈদের গান পরিবেশন করবেন। থাকবে বাউল শিল্পীদের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে সাধারণ মানুষদের আপ্যায়ন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সময় ঈদের সেমাই, মিষ্টি ও বাতাসা খেতে পারবেন।

দুই দিনব্যাপী ঈদমেলা :

ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন ও এর পরদিন এ মেলা হবে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল থাকবে। দুই দিনই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হবে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।