বাসস
  ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৬:০১
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৬:২৭

লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে ডিএনসিসি’র ঈদ আনন্দ মিছিল

ডিএনসিসি’র ঈদ আনন্দ মিছিল। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৩১ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ আনন্দ মিছিল ও ঈদের জামাত।

আজ সোমবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা উত্তরের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষাধিক মুসুল্লি অংশগ্রহণ করে এই ঈদের জামাতে। ঈদের জামাতের পর এই মাঠ থেকেই বের হয় এক বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল। লক্ষাধিক মুসুল্লিসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে এই ঈদ আনন্দ মিছিলে।

মিছিলটি বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আগত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। পাশাপাশি চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলা।

ঈদের জামাত ও ঈদ আনন্দ মিছিলে অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং ডিএনসিসি’র প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

ঈদের জামাতে অংশ নিতে সকাল ৭টার আগে থেকে দলে দলে মুসুল্লিরা আসতে থাকে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে। সাড়ে ৭টার মধ্যে নির্ধারিত মূল প্যান্ডেল মুসুল্লিতে পরিপূর্ণ হয়। পরে মূল প্যান্ডেলের বাহিরে হাজার হাজার মানুষ নামাজের জন্য অবস্থান নেয়, বাণিজ্য মেলার পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেলের বাইরেও আগত মুসুল্লিদের নামাজের সুবিধার্থে কার্পেট বিছানো ছিল লক্ষাধিক মুসুল্লির অংশগ্রহণে সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা কারি গোলাম মোস্তফা। বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী।

ডিএনসিসি’র উদ্যোগে প্রথমবার আয়োজিত এই ঈদের জামাতে ওজুর জন্য পৃথক স্থান, পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ বরাদ্দ রাখা হয়। নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা। ১০০টি মাইকের মাধ্যমে পুরো জামাত এলাকায় সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত করা হয়। ছয়টি প্রবেশ ফটক দিয়ে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করেন। মুসল্লিদের সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুরো মাঠ সিসিটিভি’র আওতায় আনা হয়। মাঠে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মাঠ জুড়ে অবস্থান নিয়ে রেখেছিলেন। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছিলেন বিএনসিসি, স্কাউটের সদস্যরা। এছাড়া সেনা সদস্যরাও মাঠে পায়ে হেটে টহল দিচ্ছিলেন।

ঈদের জামাত শেষে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠ থেকে শুরু হয় ঈদ আনন্দমিছিল। ব্যান্ডদলের বাদ্যবাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে হইহুল্লোড় করে আনন্দমুখর পরিবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই মিছিলে। ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তাসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক’ বলে আনন্দধ্বনি তোলেন। মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরও ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাসসংবলিত ১০টি পাপেট শো। আনন্দমিছিল থেকে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেওয়া হয়। মিছিলটি খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়।

ঈদ আনন্দমিছিল শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে জাসাসের শিল্পীরা ঈদের দর্শকপ্রিয় গান ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি পরিবেশন করেন। এর পর ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম, দেখা পাইলাম না’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো শিল্পীরা পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ সময় সাধারণ মানুষদের সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তৃতার শুরুতে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদটাকে সত্যিকার অর্থেই ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল, সেটা হয়তো কয়েক শ’ বছর পর আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে প্রতিবছর এভাবেই নগরবাসী এক হয়ে ঈদ উদ্যাপন করবে। এখন থেকে ঈদ উৎসব হবে আনন্দময়। ঘরে বসে টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে না। সবাই একসঙ্গে ঈদ মিছিল করবে, মেলা উপভোগ করবে, সবাই একসঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেবে।’

ঈদ আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছেন জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ঈদের আনন্দ সকলের। ঈদের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, ঈদের নামাজের পর ঘরে ঢুকে যাওয়া এবং শুধু নিজেদের পরিবারকে সময় দেওয়া, সেটার পরিবর্তন দরকার। কারণ, ঈদ মানেই জমায়েত, সমাজের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা। তাই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগই নেওয়া হয়েছে।’