শিরোনাম
মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : রাজশাহী অঞ্চলের অনেক মানুষ বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ জৈব সার ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত হয়ে ধীরে ধীরে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। গত কয়েক বছর ধরে ফসল ও সবজি চাষের জন্য এই সারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মূলত, উদ্যোগটি এই অঞ্চলে রাসায়নিক সারের ওপর ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে অনেক অবদান রাখছে, যার মধ্যে এর বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলও রয়েছে।
জেলার পবা উপজেলার কারিগর পাড়া গ্রামকে ইতোমধ্যেই শতভাগ ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারী গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাসস’র সাথে আলাপকালে গ্রামের কৃষক জব্বার আলী বলেন, তিনি ২০১৭ সাল থেকে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপণন করে আসছেন। জৈব সার বিক্রি করে তিনি প্রতি মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা আয় করেন।
গ্রামের অন্যান্য কৃষক, মোমেনা বেগম, সুলতান আহমেদ ও অমৃতা সরকারও ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের সাফল্যের কাহিনী বলেছেন।
কারিগর পাড়ার বাইরে ভার্মিকম্পোস্টিং প্রবণতা অন্যান্য গ্রামেও প্রসারিত হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলার করিবোনা গ্রামে ভার্মিকম্পোস্টিং একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক কৃষি পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে- যা মাটির উর্বরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
মোহনপুর উপজেলার শিংঘামারা গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী সাহার বানুর সহায়তায় স্থাপিত একটি গৃহস্থালী কারখানায় ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করে প্রায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
এক্ষেত্রে এই দম্পতি শিক্ষকের ভূমিকাও গ্রহণ করেছেন। তারা তাদের গ্রামের অন্যদের ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী হতে শেখাচ্ছেন।
তারা তাদের উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ১০জন মহিলাকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ও তাদের নিজস্ব ভার্মিকম্পোস্ট খামার স্থাপনে সহায়তা করার পরিকল্পনা করছেন।
এই দম্পতি তাদের উদ্যোগকে সম্প্রসারিত করার জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছেন। তাদের লক্ষ্য প্রতিদিন ৪শ’ মণ ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা।
একই উপজেলার মহিষকুন্ডি গ্রামে বছরের পর বছর দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে এই সার তৈরির কারণে শাহ আলম এবং তার স্ত্রী মমতাজের জীবনও উন্নত হয়েছে।
এদিকে, নাচোল উপজেলার খড়িবোনা গ্রামের রায়হান কবির ২০১৭ সালে পাঁচটি মাটির পাত্রে ২ হাজার কেঁচো দিয়ে তার ভার্মিকম্পোস্ট উদ্যোগ শুরু করে একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
তিনি প্রায় ২৭,৩০০ টাকা মূল্যের ২,১০০ কেজি ভার্মিকম্পোস্ট বিক্রি করেছেন এবং বর্তমানে ৬শ’ কেজি মজুদ রয়েছে।
একই উপজেলার গুলালপাড়া গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ আলী বলেন, পান চাষের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট বিশেষভাবে উপকারী প্রমাণিত হয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তার অনেকসহ-কৃষক এখন একই পদ্ধতি গ্রহণ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে আসছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ভার্মিকম্পোস্টিং কৃষিতে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।
তিনি আরো বলেন, পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন সবজি চাষের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সরকার ও এনজিও সংস্থাগুলোর উদ্যোগের মাধ্যমে এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরে ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার গ্রহণ করেছে।
ডিএই’র অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান বলেন, রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা পুনরুদ্ধারের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট সার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিএই থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর অনেক কৃষক এই জৈব সার তৈরি শুরু করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কৃষকদের মধ্যে ভার্মিকম্পোস্ট সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, যাতে করে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে জমির হ্রাস হওয়া উৎপাদন ক্ষমতা আবার ফিরে পায়।’