শিরোনাম
রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাত্রাবাসটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
জরাজীর্ণ ভবন। অধিকাংশ জানালার কাচ ভাঙা। দেয়ালে শেওলা আর আবর্জনার স্তূপ। দূর থেকে দেখে মনে হয়, এ যেন কোনো পরিত্যক্ত ভবন। ভিতরে পরিচ্ছন্ন থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। ছাত্রাবাসটি কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় সংস্কারে গুরুত্ব দেন না কর্তৃপক্ষ। সব দায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর চাপিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গত বছর ৫ আগস্টের আগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দখলে থাকায় কোনো ছাত্রাবাসের সংস্কার হয়নি। তবে ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নানা দাবি-দাওয়া পূরণ হলেও, সেগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থা আগের মতোই রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
কলেজসূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাত্রাবাসটিতে রয়েছে ১৬টি ইউনিট। ১ ইউনিটে ৪টা করে ব্লক। রুম রয়েছে ৮০টি। প্রতিটি রুমে থাকেন ৪ জন করে শিক্ষার্থী। সেখানে মোট ৩২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তবে এতসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও নেই তদারকি। ফলে শিক্ষার্থীদের শুধু বসবাসের জায়গা থাকলেও নেই নিরাপত্তা।
এদিকে রাস্তার পাশে হওয়ায় শব্দদূষণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ তলার ৪০১ নং কক্ষের একজন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন এমন অবস্থায় থাকায় যানবাহনের শব্দে বধির হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষের প্রায় সিলিংফ্যান নষ্ট। পলেস্তারা খসে পড়ছে। লাইট নেই। আছে পর্যাপ্ত আলোর সংকট। প্রতিটি ব্লকের ৪টি করে টয়লেট থাকলেও বেশির ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ রুমের ছাদে ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়েছে দেয়ালের পলেস্তারা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন অপরিষ্কার থাকায় বেড়েছে মশা-মাছির উপদ্রব।
অন্যদিকে ছাত্রাবাসের মিটিংরুমে রাখা হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। গত ৩ মার্চ দ্বিতীয় তলার ওই রুমে হঠাৎ পলেস্তারা খসে পড়ে। অন্যান্য রুমে ফাটল ধরায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ছাত্রাবাস ঘিরে আবর্জনার স্তূপগুলো পরিষ্কার না করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় তৈরি হয় কালো ধোঁয়া। শিক্ষার্থীদের ঘরে সেই ধোঁয়া গেলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় বলে জানান তারা। এতে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ।
রংপুর মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান আবির বলেন, ‘আমার রুমমেট ঘুমিয়ে থাকায় তার পাশেই হঠাৎ করে পলেস্তারা খসে পড়ে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। কখন কোথায় পলেস্তরা খসে গায়ে পড়বে, তা নিয়ে আতঙ্কে থাকি।’
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদ মিয়া বলেন, ‘ছাত্রাবাসে এত শব্দ যে, আর নিতে পারি না। আমার রুমমেট কিছুটা বধির হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাইরের ময়লাগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় কালো ধোঁয়া রুমে ঢোকে। কর্তৃপক্ষের এমন অবহেলায় ভুগতে হচ্ছে সবাইকে। এটি মেনে নেওয়ার মতো নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রাচীর দেয়াল না থাকা, সিকিউরিটি গার্ড না থাকায় অনেক সময় বিপদের মুখে পড়তে হয়। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তা দেখান না। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিত্য দাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা দেখে আসছি। ছাত্রাবাস সংস্কারের জন্য অনেক বাজেট আসে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটায় কোনো গুরুত্ব দেন না। তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্তরাও গুরুত্ব দেননি, এখনো দেন না। যে বাজেট দেওয়া হয়, তাতে নিম্নমানের কাজ করায় অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।’
ছাত্রাবাসের হল সুপার ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহ. জহুরুল হকের কাছে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হলের বিষয়গুলো সম্পূর্ণ গণপূর্ত সরাসরি তদারকি করে। আমরা শুধু চাহিদাপত্র দিই। এ দায়িত্বগুলো অধ্যক্ষের অধীনে দেওয়া দরকার। তা হলে আমাদের মতো করেই কাজ করতে পারব।’
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রাবাস ক্যাম্পাসের বাইরে হওয়ায় আনসাররা যেতে চান না। বাইরের দোকানদাররা ভিতরে ঢুকে জায়গা দখল করে নিয়েছেন। সেটা উদ্ধার করার জন্য কাজ করছি। ছাত্ররা লিখিত অভিযোগ দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছি। ওখানে তিন-চারটা হল আছে, যেগুলোতে সমস্যা আছে। সম্প্রতি কোনো বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করা হবে।