শিরোনাম
ভোলা, ৭ এপ্রিল, ২০২৫, (বাসস) : ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর নৌ-রুটের ডেঞ্জারজোনে আইন না মেনে প্রতিনিয়তই যাত্রী নিয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-যান। এখানকার একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন রুটে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মেঘনা নদীর ডেঞ্জার জোনে ঝুঁকিপূর্ণ এসব নৌযান চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া এসব ছোট নৌযান মালিকদের লোকজন ঈদে কর্মস্থলে ফেরা মানুষকে জোরপূর্বক তাদের ট্রলারে উঠতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে অসাধু ব্যক্তিদের পেশীশক্তির কাছে জিম্মি হয়ে প্রতিদিন বাধ্য হয়েই এসব নৌ- রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল নদী পাড়ি দিচ্ছেন হাজারো মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে কারনে নৌ দুর্ঘটনা আশংকা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন এসব নৌযান বন্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট লঞ্চ ও ট্রলারযোগে উত্তাল মেঘনা,তেঁতুলিয়া,কালাবাদর এবং বেতুয়া নদীতে যাত্রী পারাপার করছে । এতে করে যে কোন সময় বড় ধরনের নৌ - দুর্ঘটনার আশংকা করছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আজ সোমবার সকালে ইলিশা ফেরিঘাটে কথা হয় ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা চট্রগ্রামগামী যাত্রী আবুল বাশার,আব্বাসউদ্দীন,আশরাফুল ইসলাম, জেসমিন ও জুহানার সঙ্গে ।তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,এ ঘাটে প্রশাসনের দক্ষ তদারকির অভাবে ছোট লঞ্চ-ট্রলার মালিকচক্রের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি।
তথ্যমতে,উপকূলীয় জেলা ভোলা,বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর'সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার নদীপথে ১৫ মার্চ থেকে আগামী ৭ মাসের জন্য শুরু হয়েছে ডেঞ্জার জোন মৌসুম। এসময়টাতে এখানকার নদীপথ ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুূর্যোগে অশান্ত হয়ে উঠার কারণে এ মৌসুমে উপকূলের এ নদীর বিশাল অংশে আগামী সাত মাস ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় এ অঞ্চলে কেবল বে-ক্রসিং সনদ (সমুদ্রে চলাচলযোগ্য নৌযান) ছাড়া অন্য কোনো নৌযান চলতে পারবে না এমন সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। যে কারণে মেঘনা,তেঁতুলিয়া,ইলিশা,কালাবাদর ও বেতুয়ার মতো উত্তাল নদীগুলোতে ঝড়ের এ মৌসুমে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ'র আওতাধীন নির্ভরযোগ্য নৌযান সি-ট্রাক চলাচলের কথা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় দু'একটি সিট্রাক এখানকার নদীপথে চলাচল করলেও অধিকাংশ জলযানগুলো ডকইয়ার্ডে মেরামতের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক জানানো হয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ মাস ভোলার মেঘনার ১৯০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সি সার্ভে ছাড়া সকল ধরনের নিরাপদহীন নৌ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এখানে। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলা জেলার উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় চলছে ফিটনেস ও অনুমোদনহীন ছোট ছোট লঞ্চ ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। দু'একটি রুটে সি-ট্রাক কিংবা সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত লঞ্চ থাকলেও বেশিরভাগ রুটে-ই ফিটনেসবাহী লঞ্চ না থাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে।
বিশেষ করে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট, দৌলতখান-মির্জাকালু থেকে চর জহিরুদ্দিন ও লক্ষ্মীপুরের আলেকজ্যান্ডার-রামগতি, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন থেকে মনপুরা এবং মুজিবনগর, কুকরী-মুকরী, ঢালচর, পটুয়াখালীর বাউফলসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ও উপ-দ্বীপগুলোতে চরম ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে যাতায়াতের দৃশ্য এখন ওপেনসিক্রেট।
ভোলার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌ-পথ হওয়ায় প্রয়োজনের তাগিদে নদী পথেই যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপদ লঞ্চ ও সিট্রাক নেই। তাই বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার, ইঞ্জিন নৌকা, ফিটনেস বিহীন ছোট ছোট লঞ্চে মেঘনা নদীর ডেঞ্জার জোন পাড়ি দিচ্ছে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে। এসব বিষয়ে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএ ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন'র সঙ্গে।তিনি বাসস'কে জানান,আমরা প্রতিনিয়তই অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি,জরিমানা করছি,তবুও তারা বেপরোয়া। তিনি জানান,এখানে আমাদের জনবল সংকট না থাকলেও বিআইডব্লিউটিএর নৌযান সংকট রয়েছে। নির্ভরযোগ্য নৌযান না থাকায় অসাধু নৌযানচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে কোস্টগার্ডের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে বলেও জানান এ বন্দর কর্মকর্তা।
এব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান, বাসস'কে জানান, নিরাপদহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং অদক্ষ স্পিড বোর্ড চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আগেই ভোলার এসব ডেঞ্জার জোনে অবৈধ নৌযান এর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান তিনি ।