শিরোনাম
ঢাকা, ৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলের ব্যাপক বোমা হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা ও নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধ ও ইসরাইলের বিচারের দাবি জানানো হয়।
সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর, উত্তরা, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে বিক্ষোভে নেমে পড়েন। বিক্ষোভকারীদের কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়াতে দেখা যায়নি। শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন স্লোগান ও প্লাকার্ডের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন ও গাজার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ‘নো ওয়ার্ক-নো স্কুল’ কর্মসূচি পালন করেছে। এই কর্মসূচি ঘিরে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বাদ দিয়ে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের অভিভাবকরা যোগ দেয়।
ঢাকার কয়েকটি এলাকার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘুরে দেখা যায়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্বাধীন ফিলিস্তিন ও গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। এসময় তাদের ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি, ‘সেভ গাজা, ‘বয়কট ইরাইলি প্রোডাক্ট, ‘ইসরাইলের কালো হাত-ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’ সহ নানা স্লোগান। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী জান্নাত-ই-তাজরীন বলেন, ইসরাইল গাজায় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা চালাচ্ছে । সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু তার মায়ের স্তন্যপানের আগেই ইসরাইলের ছোড়া বোমায় মারা যাচ্ছে। নারী-পুরুষ, শিশু এমনকি স্বেচ্ছাসেবকদেরকেও টার্গেট করে মারছে ইসরাইলি বর্বর সেনারা। মানুষ হিসেবে সন্ত্রাসী ও দখলদার ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমি চুপ থাকতে না পেরে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি। আমি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সমাবেশে যোগ দেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, মানবতার এই বিপর্যয় থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে এর প্রতিবাদ করতে হবে। কারণ, আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ প্রকাশ পাবে না। আমি বলতে চাই, এই প্রতিবাদ আমাদের সবার মধ্যে জাগ্রত হোক, সঞ্চারিত হোক। আমরা সবাই মিলে একতাবদ্ধ হয়ে এর প্রতিবাদ করি। আমরা যদি প্রতিবাদ না করি তাহলে মানবতার এই দুঃসময় কাটানো সম্ভব হবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একটি কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.রেজাউল করিম। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয় নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বুঝি না একটা জাতির উপরে এভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, কিন্তু বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ ও সংগঠনের কোনো টনক নড়ছে না। আমরা প্রতিবাদস্বরূপ ইসরাইলের সকল পণ্য বয়কট করতে পারি, ফিলিস্তিনিদের জন্য ফান্ড তৈরি করতে পারি। আমাদের জায়গা থেকে যা যা করা সম্ভব আমরা করবো। আমরা মহান রবের দরবারে দোয়া করি যাতে মহান আল্লাহ তায়ালা ফিলিস্তিনিদেরকে হেফাজতে রাখেন।
ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাসস’কে বলেন, বিক্ষোভকে ঘিরে ঢাকায় কোনো ধরনের সহিংসতার তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢাকায় পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকে ঘিরে কোনো ধরনের সহিংস পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে।