বাসস
  ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৯
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০৪

বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের আশ্বাস বিএনপির

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ এ যোগ দেন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ এ কর-স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করব; যা নিশ্চিত করবে ন্যায্য আচরণ, কর-স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের অধিকার। এই আইনি কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা দেবে এবং বাংলাদেশকে একটি স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরবে।’

বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির খসরু বলেন, নীতিগত অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আর্থিক পূর্বাভাসকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই শুল্ক, করহার এবং রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল নীতির প্রয়োজনীয়তা আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে নীতিতে পরিবর্তন করলে বিনিয়োগ ব্যয় প্রক্ষেপণে সমস্যা হয়; যা এড়াতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রানীতি স্থিতিশীল রাখা জরুরি যাতে মুনাফা রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নির্বিঘ্ন হয়।

বিএনপি বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে একক কর্তৃপক্ষের অধীনে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সকল সেবা আনার প্রস্তাব করেছে বলে জানান তিনি।

আমির খসরু বলেন, বিডার অধীনে একটি ‘সিঙ্গেল উইন্ডো ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা হবে; যা ৪৮ ঘণ্টায় কোম্পানি নিবন্ধন এবং ৭ দিনের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। কর, ফি ও শুল্কে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হবে এবং ডিজিটাল ওয়ান-স্টপ সেবা চালু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা হবে এবং ডকুমেন্টেশনের জটিলতা কমানো হবে। এই পদক্ষেপগুলো প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে।

তিনি জানান, বিডাকে একটি আইনি ক্ষমতাসম্পন্ন সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হবে; যা কাস্টমস, রাজস্ব, আইন-শৃঙ্খলা ও ব্যাংকিং খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রকল্পের জন্য একজন ‘এফবিআই ক্যাপ্টেন’ নিয়োগ করা হবে; যিনি পুরো বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার একমাত্র যোগাযোগ ব্যক্তি হিসেবে কাজ করবেন।

টেকসই আস্থা গড়ে তুলতে বিডার অধীনে ২৪ ঘণ্টা চালু ইনভেস্টর হেল্পডেস্ক ও অভিযোগ নিষ্পত্তির একটি আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

তিনি বলেন, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ দ্রুত সমাধান করা যাবে এবং তাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালী হবে।

বিএনপি বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল বা বাতিল করার কথা বলেছে বলে জানান তিনি।

আমির খসরু বলেন, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা ১০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বহুবার প্রবেশযোগ্য (মাল্টিপল এন্ট্রি) ইনভেস্টর ভিসা চালু করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব বিদেশি কোম্পানি নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে; তারা যাতে ৩০ দিনের মধ্যে মুনাফা নির্বিঘ্নে স্থানান্তর করতে পারে; তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া দ্বৈত কর পরিহার ও দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি আরও বৃদ্ধি করা হবে। ভ্যাট ও কাস্টমস রিফান্ড ডিজিটালাইজ করা হবে; যাতে দ্রুত রিফান্ড পাওয়া যায়।

কার্যকর ব্যবসা পরিবেশ গঠনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে এবং জোন অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা হবে যাতে ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপ না থাকে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি ‘প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে’ পরিবেশ তৈরি করা; যাতে বিনিয়োগকারীরা প্রথম দিন থেকেই কার্যক্রম শুরু করতে পারেন, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযুক্তিগত ও পেশাগত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে।

আমির খসরু বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষিত পেশাজীবীদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেতন ভর্তুকি দেওয়া হবে; যাতে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরতা কমে।