শিরোনাম
ঢাকা, ৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, আমাদের সরকারের গৃহীত সব ব্যবস্থার মূলে রয়েছে সাংস্কৃতিক নিরাময় (কালচারাল হিলিং) এবং আরেকটা হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি।
আজ বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে ১৪৩২ বাংলা সালকে বরণ করতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক দর্শন (কালচারাল ফিলোসফি) থেকে বলতে চাই, কেন কী কারণে কোন জায়গা থেকে সাংস্কৃতিক কাজ করছি। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের সরকারের গৃহীত সব ব্যবস্থায় মূলে আছে দুটো বিষয়। একটা হচ্ছে কালচারাল হিলিং এবং আরেকটা হচ্ছে ইনক্লুসিভনেস। কালচারাল হিলিং হচ্ছে আপনারা জানেন যে, আমরা দীর্ঘদিন বিভাজনের মধ্যে ছিলাম। এই বিভাজনের ফলে আমাদের একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেকটা গোষ্ঠীর দুরত্ব, সংশয়, অবিশ্বাস এগুলো তৈরি হয়েছে। এই হিলিংয়ের কাজটা আমরা করছি। সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একত্রে উৎসব করার চেষ্টা করছি। এর মূল কারণ কালচারাল ইনক্লুসিভনেস। সেটা থেকে হিলিংয়ের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাসব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে সেসব আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, সব জাতিগোষ্ঠী এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পরোক্ষ বা কিছুটা প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় যে অনুষ্ঠানগুলো হয়েছে বা হচ্ছে কিংবা বেসরকারি উদ্যোগেও হচ্ছে। কিন্তু ফ্ল্যাগশিপ অনুষ্ঠান বলতে যা বোঝায় সেটা হতে যাচ্ছে এবার।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদরাতে ঈদের অনুষ্ঠান হয়েছে। সামনে সারাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান হবে। এটা শুধু মুসলমানদের উৎসব বলে নয়, অন্য ধমাবলম্বীদের যেসব বড় উৎসব আছে সেগুলোকে কেন্দ্র করে শিল্পকলা একাডেমি সারাদেশ জুড়ে সাংস্কৃতিক উৎসব করবে।
তিনি বলেন, পাশাপাশি নতুন বছরের অনুষ্ঠানে- চৈত্রসংক্রান্তি। সেখানেও আপনারা দেখেছেন, সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে আমরা আয়োজন-উৎসব করার চেষ্টা করছি। এটার মূল কারণ একই কালচারাল ইডনক্লুসিভনেস।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শক্তি ও সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্য; এই বৈচিত্র্যকে আমরা সেলিব্রেট করতে চাই। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর উৎসবগুলো চৈত্রসংক্রান্তি ঘিরে হয়। আমাদের উৎসবটাও তাই এবার চৈত্রসংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে। আপনারা জানেন, বাঙালিরা ট্রাডেশনালি চৈত্রসংক্রান্তি পালন করতো। আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতিসত্ত্বা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে নানা উৎসব রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা চৌধুরী তিথি।
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় সাধুমেলা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশার, সিলেট, ঢাকা, মাগুরা, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া। সেখানে সাধুসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক গানের অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এ দিন শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বসবে ফাগুয়া উৎসব।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অন্যান্য দপ্তরে যেসব অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে বাংলা ভাষাভাষী আধ্যাত্মিক ধারার সঙ্গীতানুষ্ঠান নিয়ে ১২ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখী সাধুমেলা হচ্ছে- চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, মাগুরা, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া-এই ১২ জেলায়।
১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ব্যান্ড ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ফাগুয়া উৎসব হবে। এ উৎসবে জনপ্রিয় ধারার ব্যান্ড, ঢাক-ঢোল এবং লাঠি খেলা সমন্বয়ে ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে এফ মাইনর (গারো সম্প্রদায়), লা-রাং (মারমা সম্প্রদায়), ইমাং (ইমাং সম্প্রদায়), ইউনিটি (খাসিয়া সম্প্রদায়), ইনভোকেশন (চাকমা সম্প্রদায়), মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, এভোয়েড, বাফা, দলছুট ও স্টোনফ্রি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আগামী ১৩ থেকে ১৪ এপ্রিল শুরু হচ্ছে- গান, ভিডিও প্রদর্শনী, ধামাইল নৃত্য ও গান, সেমিনার নিয়ে সাজানো হয়েছে, নবপ্রাণ আন্দোলনের চৈত্রসংক্রান্তি ও বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠান ‘বাংলার উৎসব-১৪৩২’।
১৪ এপ্রিল দেশের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চ্যঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, কোল, মাহাতো, মুন্ডা, মনিপুরী, বাজোয়াড়, মনিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও রাখাইাদের অংশগ্রহণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারা’র আয়োজনে সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভূক্ত করে বাংলার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। রমনার বটমূলে ছায়ানট বর্ষবরণ করবে সকাল ৬টা, ১৫ মিনিট থেকে ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। শুভ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মানিক মিয়া এভিনিউতে বিকাল ৩টা থেকে বৈশাখী ব্যান্ড শো এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। চীনা কারিগরি দলের পরিবেশনায় সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২ হাজার ৬০০ ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমি ও বিসিকের আয়োজনে ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী মেলা।
১৫ এপ্রিল ব্যান্ড দল, নৃত্য দল, কন্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করবে ব্যান্ড দল বাংলা ফাইভ, রে-রে, অনিমেষ ও সর্বনাম। নান্দনিক নৃত্য সংগঠন, স্পন্দন, বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, স্বপ্নছোঁয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা, মেহেরপুর, ১০০জন নবীন শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য, বাংলাদেশ শিল্পকলার একাডেমির নৃত্যশিল্পী, কন্ঠশিল্পী এবং যন্ত্রশিল্পীদের পরিবেশনায় একক শিল্পী ফেরদৌস আরা।
১৩ থেকে ১৯ এপ্রিলের মধ্যে যে কোন তিনদিন দেশের ৩০টি জেলায় বৈশাখী লোকনাট্য উৎসব শুরু হবে। লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, রংপুর, নড়াইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, যশোর, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ ও শেরপুরের প্রতি জেলায় ওই জেলার পালাগান, কবিগান, পুঁথিপাঠ, জারিগান, পুতুল নাচ, লাঠি খেলা, ঢাকিনৃত্য এবং ঐতিহ্যবাহী লোকজ উপাখ্যান সংবলিত লোকনাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় দেশের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুর- এই ১২ জেলায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিকস দলের অ্যাক্রোবেটিকস প্রদর্শনী হবে।
সোনারগাঁ’য়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে ।
নেত্রকোণার বিরিশিরিতে ১৩ এপ্রিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে লোকজ সংস্কৃতি মেলা।
খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট ৪ থেকে ৭ এপ্রিল উদযাপন করবে বৈসু সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বিহ, সাংলান ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২।
কক্সবাজারে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে চৈত্রসংক্রান্তি বা সাংগ্রাই বিজু অনুষ্ঠান।
বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু বিহ মেলা-২০২৫ উদযাপন করবে ৩ থেকে ৯ এপ্রিল রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউট। ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় বৈশাখী শোভাযাত্রা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
একইদিন রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২৫ অথবা ২৬ এপ্রিল নওগাঁ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে বর্ষবরণ উপলক্ষে সারহুল উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে সাংগ্রাই, বিজু ও বৈসু উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে ১২, ১৩, ১৫, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল।
মণপুরী ললিতকলা একাডেমি প্রাঙ্গণের উদ্যোগে ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে বিষ্ণু, চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ মেলা, ঐতিহ্যবাহী নিকন খেলা ও স্বকীয় পোশাক প্রদর্শণী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।