বাসস
  ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০৭

নওগাঁয় সূর্যমুখী ফুলের অধিক ফলনের আশা

ছবি : বাসস

নওগাঁ, ১০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) :  জেলার কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন । বর্তমানে সূর্যমুখীর অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদান করা প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে রয়েছে।  একই সাথে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এ ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন জেলার কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় গত বছর ৬৫ হেক্টর জমিতে এ ফসলের চাষ হয়েছিলো। চলতি বছর মাত্র ৩০ হেক্টর জমি এ ফসলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাণীনগর উপজেলায় কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সহজেই সরিষার তেল উৎপাদনের মতো সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল উৎপাদনের সহজলভ্য পদ্ধতি না থাকাকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ।

এছাড়া সরিষা চাষের পর ধান চাষের সুযোগ থাকলেও সূর্যমুখী দীর্ঘ সময়ের ফসল হওয়ায় সূর্যমুখী চাষ করে ধান চাষে যাওয়া যায় না। মূলত এ সমস্যাগুলোর কারণে প্রতি বছরই জেলাতে এ লাভজনক ফসলের চাষ কমছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।কৃষকরা জানান, সরিষার তেল বের করার মতো ব্যবস্থা সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল বের করার ক্ষেত্রে  নেই। জেলার কৃষকদের জন্য  সরকার তেল বের করার  ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। তাহলে স্বাস্থ্যসম্মত অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল সহজেই ভোক্তারা সংগ্রহ করতে পারতেন। ফলে সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের সূর্যমুখী চাষী নুরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষ অনেক লাভজনক। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব আর প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি লিটার তেলের বাজার সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৪২০ টাকা।

বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর গ্রামের কৃষক সোলেমান আলী বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘা থেকে উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে আয় করা সম্ভব ২৫-৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে সূর্যমুখী বীজের তেলের অনেক চাহিদা রয়েছে। 

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, সূর্যমুখী চাষে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এছাড়া সেচ দিতে হয় খুবই কম। যার কারণে অল্প খরচে অধিক লাভ করা সম্ভব। এছাড়া এ ফসলে পোকা ও মাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। এক কথায় কম খরচে, কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হতে হলে সূর্যমুখী ফুল চাষের কোন বিকল্প নেই। তবে সরিষার মতো সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল বের করার পদ্ধতি সহজলভ্য না হওয়ার কারণে কৃষকরা দিন দিন সূর্যমুখী ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল হয় তা অন্যান্য ভোজ্য তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত। অলিভওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সরিষার তেলে অনেকের সমস্যা হয়। তাই সোয়াবিনের তেলের উপর চাপ কমাতে সূর্যমুখী তেলের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে জেলাতে প্রতি বছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষ কমছে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এ তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের ঊর্ধবতন বিভাগকে সূর্যমুখী ফুল চাষে প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলো লিখিতভাবে জানিয়ে আসছি। এছাড়া আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনার মাধ্যমে আগ্রহী কৃষকদের এ লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি।