শিরোনাম
লক্ষ্মীপুর, ১১ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস): হাসিনা সরকার পতনের পর লক্ষ্মীপুরে ২৫০শয্যা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ ফেলে পালিয়েছে ঠিকাদার। এতে করে পুরাতন ভবনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রোগীরা। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় দফা কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ৪ বছর পার হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভবন নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঠিকাদার পালিয়েছে। তারা অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিচার ও ভবন নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুত চালুর দাবি জানান। জানা যায়, প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন মেয়াদ বৃদ্ধি করে পুনরায় কাজ শুরু করতে হবে।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালের আউটডোর বিভাগের জন্য নির্ধারিত ভবনটি ব্যবহারযোগ্য না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার লাখ লাখ মানুষ। লক্ষ্মীপুরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটে চিকিৎসা করাতে ভিড় করছেন নারী-পুরুষসহ নানা বয়সী মানুষ। শুধু আউটডোর বা জরুরি বিভাগই নয়, প্রত্যেকটি বিভাগে রোগীর চাপ বাড়ছে কয়েকগুণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি বেডে ১০০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রত্যেক বেডে দুই থেকে তিনজন করে শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল বেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝে এবং বা বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন গড়ে তিনশ থেকে চার’শ রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি থাকে। এসব কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের ১৪ই মার্চ ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন তৎকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। রুপালি জিএম অ্যান্ড সন্স কনস্যুডিয়াম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। প্রথম পর্যায়ে কাজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১২ জুন কাজটি শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম দফায় কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন পর্যন্ত নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কাজের ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা করা হয়। এরপর আরও চার বছর পার হয়েছে। দেড় বছর মেয়াদি কাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। দ্রুত ভবনের কাজ শেষ করে হাসপাতাল কার্যক্রম চালুর দাবি জানান স্থানীয়রা।
হাসপাতালের সামনে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা অ্যাডভোকেট আবুল ফারাহ নিশান, মাসুদুর রহমান,জাহাঙ্গীর আলম, তৈয়বুর রহমানসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, তৎকালীন সরকারের সেতুমন্ত্রীর ভাগিনা পরিচয়দানকারী ইস্কান্দার মির্জা শামীমের নেতৃত্বে গণপূর্ত বিভাগে প্রভাব বিস্তার করে কাজ বাগিয়ে নেয়। এরপর নানাভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। তখন তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। দায়সারাভাবে কাজ করা হয়। কাজ না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়া নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে পুরাতন ভবনে রোগীদের গাদাগাদি করে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলে দুর্ভোগের কোন শেষ নেই। অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিচার ও নতুন ভবন কার্যক্রম শুরু করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয়রা। মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা দ্রুত কাজ শেষ না করার দাবি জানান। শিগগিরই তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা ।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল বলেন, নতুন ভবনের কাজ প্রায় শেষ। সামান্য কিছু অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাকী রয়েছে। তবে কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়।
তিনি বলেন, বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেশি। এ কারণে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।এখন আবার নতুন মেয়াদ বৃদ্ধি করে কাজ শুরু করা হবে।