বাসস
  ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৫৪

অনুন্নত যোগাযোগ ও দাম কমে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষীরা লোকসান ঝুঁকিতে

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করছেন চাষীরা। ছবি : বাসস

নেত্রকোনা, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : অন্যান্য ফসলি সবজির মতো এই মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার দাম কমে যাওয়ায় এ বছর কৃষকরা লোকসান ঝুঁকিতে পড়েছে। কৃষকরা চাষের খরচ তুলতে পারবে কিনা এমন শঙ্কায় পড়েছে। এর মধ্যে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় পণ্য বাজারজাত নিয়ে আরো দুশ্চিন্তা গ্রস্থ কৃষকরা।

আজ  শনিবার সকালে জালিয়ার হাওর এলাকায় মিষ্টি কুমড়ার হালচাল দেখতে গেলে কৃষক সোনাতন মিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানা যায়।

গত বছর লাভের মুখ দেখায় স্থানীয় জালিয়ার হাওরের তিন একর জমিতে তিন লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এবারো মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছিলেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের চারিতলা গ্রামের কৃষক সোনাতন মিয়া (৫৫)। তবে এ বছর লাভের বদলে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। মিষ্টি কুমড়ার বাজার মূল্য কম থাকায় এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন। এবছর উৎপাদন খরচটুকু তুলতে পারবেন কিনা- তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন কৃষক সোনাতন মিয়া।

একই অবস্থা জেলার হাওরাঞ্চল মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও কলমাকান্দা উপজেলার কয়েক শতাধিক মিষ্টি কুমড়া চাষী কৃষকের।

কৃষকদের অভিযোগ, লোকসানে পড়ার প্রধান কারণ হল হাওরাঞ্চলের অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা। তারা বলছেন, হাওরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলেই কেবল কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে এবং বদলে যাবে হাওরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি জাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ৭৩০ হেক্টর জমিতে। তবে শুধু হাওরাঞ্চলেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ৪৮০ হেক্টর জমিতে।

মিষ্টি কুমড়া চাষি মাসুদ আলী বলেন, এ বছর আমি ১৫ কাঠা (দেড় একর) জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ছিলাম। যথাসময়ে সার ও ওষুধ সবই দিয়েছি। তবুও গতবারের তুলনায় কম হয়েছে। দামও কম। গত বছর এই মিষ্টি কুমড়া ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজিতে। তাও আবার পাইকার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার আমরা আমাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া নিয়ে খুব বেকায়দায় আছি।

কৃষক আবু তাহের বলেন, আমি হাওরের সত্তর শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাথায় করে এবং বাইসাইকেলে বা হ্যান্ডট্রলির মাধ্যমে কুমড়া পরিবহন করে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে রাখতে হচ্ছে। কৃষি পণ্য পরিবহনে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয় এবং ন্যায্য দাম পাচ্ছি না।

কৃষকদের দাবি, হাওর এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতকরণের পাশাপাশি এ বছর উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়ার বাজারজাতকরণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল মিল্কী বলেন, আমাদের হাওরাঞ্চল শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। তাই এখানকার কৃষকদের স্বার্থে হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। কারণ কৃষক বাঁচলেই আমরা বাঁচব। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

হাওরদ্বীপ খ্যাত জেলার খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর পরাগায়নের সময় মৌমাছি কম থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন কিছুটা হয়েছে। তবে কৃষকরা যাতে লোকসানে না পড়েন, সেজন্য আমরা পাইকারদের সঙ্গে কৃষকদের একটা লিংক করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে নেত্রকোনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দিন দিনই বাড়ছে। এতে বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের অনাবাদি জমি কমে আসছে। আশা করছি, অনাবাদি জমির পরিমাণ একপর্যায়ে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। জেলা এবং কৃষি বিভাগ সব সময় মিষ্টি কুমড়া চাষিসহ সকল কৃষকদের পাশে আছে এবং থাকবে।