বাসস
  ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২১:৩৩

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের গণজমায়েতের মাধ্যমে ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদ

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে লাখো মানুষের ঢল। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে লাখো মানুষের গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ।

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে এবং দখলদার ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে লাখো মানুষের ঢল। ছবি : বাসস

দুপুর ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি।

গাজাবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির দিয়ে গণজমায়েত সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক।

এদিন ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট-বড় নানা বয়সি মানুষদের মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হতে দেখা যায়। নানা ধর্ম-বর্ণের, সামাজিক সংগঠন ও সব রাজনৈতিক দলের মানুষ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ফিলিস্তিনের জন্য এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও শিল্পী, কবি, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় ব্যক্তিরাও যোগ দিয়েছেন কর্মসূচিতে। দল-মত নির্বিশেষে এক কাতারে সবাই এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়েছেন। শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, মৎস্যভবন, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষকে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ফিলিস্তিনের পক্ষে নানা স্লোগান লিখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকেই।

গণজমায়েতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা-মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন সেখানকার মানুষের অধিকার। গাজার মানুষের ওপর জুলুম বন্ধের দাবিতে আমরা প্রত্যেক বাংলাদেশি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।

মিজানুর রহমান আজহারি স্লোগানে স্লোগানে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেন, আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার মহাসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি এই জনসমুদ্র ফিলিস্তিন ও আল-আকসার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তিনি আরও বলেন, ভৌগোলিক ভাবে বাংলাদেশ ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হলেও সকলের হৃদয়ে বাস করছে একেকটি ফিলিস্তিন। 

ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো : জায়নবাদী ইজরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে, যুদ্ধবিরতি নয়-গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। 

ঘোষণাপত্রে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসি’র মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর প্রতি ৫ দফা দাবির কথা উল্লেখ করা হয়। দাবিগুলো হলো ইজরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে, জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা-সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইজরাইলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে এবং জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। 

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ৬টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শর্ত পুনর্বহাল এবং ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে, ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে, গাজায় রাষ্ট্রীয়ভাবে ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে হবে, জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনে সরকারি নির্দেশনা দিতে হবে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং পাঠ্যবই ও নীতিতে আল-আকসা ও ফিলিস্তিনের সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকের মোনাজাতের মাধ্যমে  ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

এ সময় ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি জেনারেল রেজাউল করিম ও দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন উপস্থিত ছিলেন।