বাসস
  ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪৮

তিস্তা নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ পাঁচ বছর ধরে বন্ধ

তিস্তা নদীতে নির্মাণাধীন সেতু। ছবি: বাসস

|| রেজাউল করিম মানিক ||

রংপুর, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): তিস্তা নদীর ওপর সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে পিলার তবে সেতু নেই। নির্মাণাধীন সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে পাঁচ বছর ধরে। আর এতে রংপুরের কাউনিয়ার সাত গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও পুনরায় কাজটি শুরু হয়নি এবং শেষও হয়নি।

হারাগাছ পৌরসভার প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ এ দুই অর্থবছরে হারাগাছ এডিবির পৌরসভার উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে তিস্তা নদীর ওপর ৭৬ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। নদীর ওপর পিলার তৈরিও হয়। প্রথম দরপত্রে কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক অসুস্থ থাকায় সেতুটির ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দু’বার দরপত্র দিয়েও কাজটি শেষ হয়নি। তবে সময় মতো অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজটি দ্রুত শেষ করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতর।

এদিকে নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর পিলার তৈরি হওয়ার পর কাজটি বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে ছে কয়েক গ্রামের মানুষ। ওই নদী ওপর দিয়ে কাউনিয়া উপজেলার সাতটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে থাকে। সেতুটি নির্মাণ হলে তাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে কাজটি বন্ধ হয়ে আছে। যার কারণে যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে ওই সাত গ্রামের মানুষের।

মায়ার চর গফফারটারী গ্রামের বাসিন্দা রমেজ উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, আমরা যারা চর এলাকার মানুষ, নদীর চরে চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। চর এলাকায় জীবন-জীবিকা নির্বাহে আমাদের প্রচুর কষ্ট করতে হয়। বর্ষাকালে যেমন কষ্ট বাড়ে তেমনি খরায় সময় কষ্ট থাকে। নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হলে যাতায়াতে কষ্ট দূর হবে। চর এলাকায় চাষাবাদের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে নেওয়া যাবে হাট বাজারে।

চর পল্লীমারী গ্রামের কৃষক সোহরাব মিয়া বলেন, সেতুর কাজ শুরু হওয়ায় আমরা আশায় বুক বেধেছিলাম। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য বিভিন্ন বাজারে নিতে পারব খুব সহজে। কিন্তু সেতুর নির্মাণ কাজও শেষ হচ্ছে না আমাদের কষ্ট লাঘবও হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কম দামে ফড়িয়াদের কাছে ধানসহ উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।

হারাগাছ পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ৯ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান বলেন, সেতুর কাজটা শুরুর পরপরই শুনেছি নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দাম বাড়লে কাজ বন্ধ হয়ে এভাবে পড়ে থাকবে এটা গ্রহণযোগ্য বিষয় নয়। আমরা চাই অতি দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হোক।

হারাগাছ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. হামিদুর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর কাজটি পৌর অর্থায়নে করা সম্ভব ছিল না। তাই উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে দুই অর্থবছরে পৃথক দু’টি দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দরপত্রে কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুটির ২০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদার অসুস্থ হয়ে যায়। যার কারণে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদার। পরবর্তীতে কাজটি সম্পন্ন করতে দ্বিতীয় দরপত্রে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুর এন্টারপ্রাইজকে সেতুর বাকি কাজ শুরু করার তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। এখনও কিছু পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছে আছে কিন্তু সেতুর পুরোপুরি কাজ শেষ করতে আরও প্রায় ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। কাজটি শেষ করতে আমরা তাগিদ ও চাহিদা দিয়েছি। টাকা পাওয়া মাত্রই সেতুটির বাকি কাজ শেষ করতে পারব বলে আশাবাদী আমরা।

এ বিষয়ে হারাগাছ পৌরসভার প্রশাসক মো. লোকমান হোসেন বাসসকে জানান, নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু সেতুটি নির্মাণ করতে যে অর্থের প্রয়োজন সেই পরিমাণ অর্থ পৌরসভার ফান্ডে নাই। আবার আংশিকভাবে দুইবার প্রকল্প দেওয়ার কারণে নতুন করে প্রকল্পও দেওয়া যাচ্ছে না। তার পরেও আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে সেতুটির কাজ সম্পন্ন করা যায়। তবে দ্বিতীয় দরপত্রের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি দ্রুত কাজ শুরু না করে তাহলে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।