বাসস
  ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ২০:২৯

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা 

ছবি : বাসস

নেত্রকোনা, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বছরের একমাত্র ফসল  বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকরা রাত দিন এক করে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবছরই হাওরাঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তুলতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে মাঠে থাকতে হয় হাওরবাসীর।

হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জের মাঘানের গৌড়াকান্দা গ্রামের কৃষক মাকিনুজ্জামান জানান, ‘ফসল কাটা  পুরোদমে শুরু হয়েছে, সব কাটা শেষ হয়নি। ধান কাটার হার্ভেস্টার  মেশিনের অনেক সমস্যা হচ্ছে, বার বার নষ্ট হচ্ছে, প্রায় সব জমির ধান দমকা হাওয়ায় মাটিতে নুয়ে পড়েছে তাই ধান কাটতে অনেক বেশি সময় লাগছে। ‌হাওরবাসী যখন বিশাল এ কর্মজজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠিক তখনি বৈরী আবহাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ফলে বিঘ্ন ঘটছে ফসল সংরক্ষণের কাজে।

খালিয়াজুড়ি উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের বল্লী গ্রামের কৃষক মির্জা নূর আহমদ জানান, ‘ফজরের পর একটু বৃষ্টি  হয়েছিল, এখন ফসল ঘরে উঠানোর সময়, ধান অর্ধেকের কাছাকাছি কাটা হয়েছে, হার্ভেস্টার মেশিনের সাহায্যে কাটতে কম সময় লাগছে।’

একই উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ জানান, ‘সকাল থেকেই আকাশ কালো হয়ে আছে,বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, শিলাবৃষ্টি হলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে, এখন নাগাদ আমাদের হাওরে বি আর-২৮ জাতের ধান কেটে শেষ করতে পেরেছি,সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বিআর-২৯ জাতের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবো।’

মোহনগঞ্জের বিরামপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল ওয়াহাব মড়ল বলেন, ‘গত বেশ কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর এখন নাগাদ শিলাবৃষ্টি বৃষ্টি হয় নি বলে ফসলের  বাম্পার ফলন হয়েছে, পাশাপাশি এবার বিদ্যুৎ, সেচ, সার ও বীজ নিয়ে কৃষকদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি।’

আরেক হাওর উপজেলা মদনের মাঘান ইউনিয়নের কাতলা গ্রামে চৌধুরী তালে হোসেন মিছিলজান একাডেমির শিক্ষক রাশেদ বিন সিদ্দেকী জানান, ‘হাওর এলাকার  একমাত্র ফসল বোরো ধান। এ এলাকায় এখন পুরোদমে চলছে এ সোনালী ফসল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে এবছর কৃষকরা ভালোভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে।’

হাওরাঞ্চলের ফসল কাটার সর্বশেষ কি অবস্থা তা জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাসসকে জানান, ‘নেত্রকোনা জেলায় এবছর ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে হাওরাঞ্চলের জমির পরিমাণ ৪১ হাজার ৭৫ হেক্টর। আজ পর্যন্ত হাওরে শতকরা ৩১ ভাগ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারনে হাওরে কোন কোন জায়গায় ধান কর্তনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।আমরা আশা করছি আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান কর্তন করতে সক্ষম হবো।’

উল্লেখ্য যে, এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতেবোরো ধান আবাদ করা হয়েছে এবং কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা নেই তবে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদেরকে বৈশাখ মাসে করণীয় হিসেবে শতকরা ৮০ ভাগ পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।