বাসস
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৫৩

মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করতে হবে। 

তিনি আজ রাজধানীর ‘ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে’ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’।

আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, একটি শিশুর জন্ম শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির ভবিষ্যতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের সময় এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা শিশুর সুস্থতা ও বিকাশ নিশ্চিত করতে পারব। এ জন্য সরকার গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব, নবজাতকের যত্ন এবং মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, কেবল সরকার নয়-এই লক্ষ্য অর্জনে জনসচেতনতা, পরিবার ও সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ শিশু জন্মের জন্য আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে, গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ যত্ন নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য সেবাকে আরও সহজলভ্য ও সমন্বিত করতে হবে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের মা ও শিশুদের জন্য একটি উজ্জ্বল ও সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারব। 

তিনি বলেন, বর্তমানে ৫০ শতাংশ শিশু হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে, বাকি ৫০ শতাংশ জন্ম নিচ্ছে অদক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে। এর ফলে প্রায়ই প্রসবকালীন সময়ে শিশুদের অক্সিজেন ঘাটতি এবং মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। এসব ক্ষেত্রে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পাওে এবং পরে অটিজমের মতো লক্ষণে প্রকাশ পেতে পারে। একারণেই দেশে দিন দিন অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়বে।

নারীর মর্যাদা ও বাল্যবিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা নারীকে নারী হিসেবে, মাকে মা হিসেবে কতটুকু মর্যাদা দিচ্ছি? গ্রাম পর্যায়ে নারীরা আজও অবহেলিত। এখনো দেশে বালিকা বিবাহের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। কিশোরী মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে, যখন তার নিজেরই যত্ন প্রয়োজন, তখন বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে, বাচ্চার যত্ন করছে। এটা অপরাধ। এই অপরাধ সবাই দেখছি, কিন্তু কিছুই করছি না। এটা প্রতিরোধের পথে আমরা হাঁটছি না। এদিকে সবারই নজর দেওয়া দরকার। জন্ম তখনি সুরক্ষিত হবে, যদি আমরা সচেতন হই। এই প্রবণতা বন্ধ না করলে সুস্থ শিশুর জন্ম সম্ভব নয়, বরং মাতৃমৃত্যুর হার বাড়বে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য গোল অর্জনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছিল, সময়ের আগেই অর্জন করেছিলো, বর্তমানে সে ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছি। সেই বাস্তবতা নিয়ে আমাদের দ্রুত কিছু ইন্টারভেনশন ডিজাইন করা দরকার, যেন ৩০ সালের মধ্যে আমরা এসডিজি অর্জন করতে পারি। মাতৃত্ব একটি অধিকার। আজকে আমরা বিভিন্ন উপস্থাপনায় দেখলাম, জন্মদানের সময়ে সেবা দানের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবস্থপনার সঙ্গে বেসরকারি খাতের যে বিরাট পার্থক্য তা দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পর, রাষ্ট্র সকল মায়ের জন্মদানের দায়িত্ব নিতে পারেনা এটা একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা। অবশ্যই বেসরকারি খাতের অবদান স্বীকার করে নিতে হবে। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্র তখনই সফল যখন সেই রাষ্ট্রের সব মায়ের মাতৃত্ব নিরাপদ করতে পারে, যখন সব শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নিরাপদ করতে পারে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে সফল হতে হলে, আজকের প্রতিপাদ্যের সব বিষয়ের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব যার যার জায়গা থেকে পালন করবে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর সূর্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ।