বাসস
  ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:০৪
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২৭

নিকলীর হাওরপাড়ের নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘুরে ৩০০ পরিবারের চাকা

নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘুরে ৩০০ পরিবারের চাকা। ছবি: বাসস

।। এসকে রাসেল ।।

কিশোরগঞ্জ, ২১ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): জেলার নিকলীর হাওরপাড়ের নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘুরে ৩০০ পরিবারের চাকা।

নানা কারুকাজের দৃষ্টি নন্দন হাতপাখা মানেই কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর অর্ধ শত বছরের ঐতিহ্য দামপাড়া ইউনিয়নের "তালপাখা গ্রাম" খ্যাত সূত্রধর পাড়া, টেকপাড়া ও মালপাড়ায় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাত পাখা। নারীদের তৈরি হাতপাখাতেই ঘুরে এ তিন গ্রামের প্রায় ৩শত পরিবারের সংসারের চাকা। বরাবরের মতোই বৈশাখি বারুণী মেলা আর হাঁসফাঁস গরমের ভোগান্তিকে সামনে রেখে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের নারীরা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পটি আরও বিস্তৃত হবে এবং বেশি সংখ্যক নারী আত্মকর্মসংস্থানের পথ খোঁজে পাবেন বলে দাবি কারিগরদের।

জানা গেছে, প্রায় ৫৪ বছর আগে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া গ্রামের শুভা রানী সূত্রধর প্রথমে  শুরু করেন তালপাতার হাতপাখা তৈরির কাজ। তিনি তার বাবার বাড়ি থেকে শিখে আসা সেই পাখা তৈরির কাজ শেখান অন্য নারীদেরও। এর পর থেকে আস্তে আস্তে টেকপাড়া, মালপাড়া ও সূত্রধর পাড়া  গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী বেশির ভাগ নারীই জড়িয়ে পড়েন কুটিরশিল্প জাত এ কাজে। বর্তমানে মুসলিম পরিবারের অনেক নারীরাও তৈরি করছেন এসব হাতপাখা। এখানকার তৈরি তালপাতার হাতপাখা বৈশাখি মেলা আর হাঁসফাঁস গরমের আগেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেলার দোকানিরা এসে নিয়ে যায়। কারুকাজ ও নির্মাণ শৈলী ভেদে একেকটি পাখা ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। তালপাতা, প্লাস্টিক সূতা, বাঁশ ও বেতজাত কাঁচামালে তৈরি হয় হাতপাখাগুলো। প্রতিটি হাতপাখা তৈরিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা খরচ হয় তাদের। এ কুটির শিল্পজাত তালপাতার হাতপাখা তৈরির কাজই এসব গ্রামের লোকজনের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঘরের আঙিনায় কয়েকজন একসাথে বসে তৈরি করছেন এসব হাতপাখা। কেউ তালপাতা চিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা হাতপাখা তৈরি করছেন। তৈরি করা এসব হাতপাখায় বেত দিয়ে চাকা বাঁধছেন কেউ।  তালপাতায় রং দিচ্ছেন কেউ। হাতপাখা তৈরিতে একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। পড়াশোনা পাশাপাশি মেয়েরা তাদের মায়েদের সহযোগিতা করছেন। আবার কিছু কিছু পরিবারের পুরুষেরা হাতপাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করছেন।

বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এ তালপাতার হাতপাখার কদর দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের উপহার তালিকায়ও তালপাতার হাতপাখা ঠাঁই পাচ্ছে এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে।

শুভা রাণী নামে এক কারিগর জানান, পাড়ার বিভিন্ন বয়সের নারীদের অধিকাংশই তালপাতার হাতপাখা তৈরির কারিগর হিসাবে কাজ করছেন। তবে কেউ কেউ সারা বছর অন্য কাজ করলেও চৈত্র ও বৈশাখ মাস আসলে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাতপাখা তৈরির কাজে। ভরা মৌসুমে পাড়াগুলোতে এখন উৎসবের আমেজে চলছে হাতপাখা তৈরির কাজ।

শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, পড়াশোনার ফাঁকে তালপাতার পাখা তৈরির কাজে মাকে সহযোগিতা করি। তালপাতার পাখা তৈরির অর্থ দিয়ে আমাদের সংসারের খরচের পাশাপাশি পড়াশোনার খরচও চলে।

টেকপাড়া গ্রামের অলকা রায় ও দিপা রায় বলেন, তালপাতার পাখা তৈরিতে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও স্বাবলম্বী হতে পারতাম। অনুদান বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে নিকলী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার বলেন, সমাজসেবার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয় ও যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত কুটির শিল্প মেলায় তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য স্টলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।