বাসস
  ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:২৬
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪২

কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে,দরকার সরকারি সহযোগিতা

ছবি : বাসস

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ

কুমিল্লা (দক্ষিণ),২২ এপ্রিল ,২০২৫ (বাসস) : জেলার বিভিন্ন গ্রামে শত বছর ধরে  বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ করে আসছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে পান গাছে নতুন নতুন পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পানচাষীরা। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে ক্ষতি উঠিয়ে লাভবান হবেন বলে জানান তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে কুমিল্লার দেবিদ্বার, মুরাদনগর, চান্দিনা, বরুড়াসহ জেলায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। পোকামাকড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি না হলে শতক প্রতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অন্তত ৫৮ কোটি টাকার পানের বাজার রয়েছে কুমিল্লায়।

কুমিল্লার দেবীদ্বারের গুনাইঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে সারি সারি পানের বরজ। বরজে কাজ করছেন চাষী ও শ্রমিক। মাচায় ঝুলছে সবুজ পান। বাণিজ্যিক ভাবে এ চাষ চলছে প্রায় শত বছর ধরে। অনেকে বাপ-দাদার হাত ধরেই যুক্ত হয়েছেন এ চাষে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে পান চাষ হচ্ছে কুমিল্লার চান্দিনা, বরুড়া, মুরাদনগর, বুড়িচং ও নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন গ্রামে। সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল চাষে যথাযথ সহযোগিতা ও পরামর্শের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান পান চাষীরা।

দেবিদ্বারের গুনাইঘর এলাকার পানচাষী বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, আমাদের অনেক গাছ পচে যাচ্ছে,  পান পচে যায়, সঠিক ওষুধ পাইনা। আমরা অনেক টাকা পুঁজি লাগিয়েও লাভবান হচ্ছিনা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সরেজমিনে এসে সঠিক পরামর্শ ও ওষুধ দেওয়াসহ সরকারি সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমরা এ ব্যবসাকে চালিয়ে যেতে পারবো।

নিমাই চন্দ্র দত্ত বলেন,কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পান চাষ হয়। আমরা বাপ-দাদার ধারাবহিতকায় পান চাষ করি ঠিকই, কিন্তু পান চাষ করে লাভবান হচ্ছিনা। প্রায় আমাদের পান পাতা পচে যায়, লতা পচে যায়, এর কোন ওষুধ পাইনা। কৃষি অফিসারের কাছে গেলে একটা ক্ষেতের ওষুধ দিয়ে দেয়, তাতে কোন কাজ হয়না।
আরেক পান চাষী নিখিল চন্দ্র বলেন, বর্তমানে কুমিল্লার পান চাষীরা খুবই অসুবিধায় আছে। পান চাষে সঠিক পরামর্শ ও ওষুধ কোন কোম্পানি দিচ্ছেনা। অনুমান নির্ভর করে আমাদের একক সময় একেক ওষুধ দেয়, তাতে কাজ হয়না। এছাড়া আমাদের শ্রমিক সংকটও রয়েছে। আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, আমরা সব সময় পান চাষীসহ সব কৃষককেই বলে আসছি যে কোন সমস্যায় আমাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখে। পরামর্শ করে। আমাদের কর্মকর্তা যদি কোন সহযোগিতা না করে না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির  সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে পারবো। তারপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি পান চাষীদের সঙ্গে  যোগাযোগ করবো, তাদের কথা শুনবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানায়, কুমিল্লার অনেক জায়গায় ব্যাপক পান চাষ করা হয়। সে জন্য কুমিল্লার নিমসারে একটি বড় পানের আড়ত গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে ভালো মানের পান বিদেশেও নিয়ে যাচ্ছেন রপ্তানীকারকরা। আমরা নিয়মিত পান চাষীদের  সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ও তাদের পোকামাকড় দমনে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরো উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে পানের আবাদ করা গেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরা সম্ভব। সে অনুযায়ী পরামর্শ দেয়া হচ্ছে স্থানীয় চাষীদের।