বাসস
  ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৩৭

ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল করে সংগঠন করার অধিকার বিস্তৃত করতে সুপারিশ

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল করে সংগঠন করার অধিকার বিস্তৃত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন গতকাল তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।

সংগঠন, দরকষাকষি অধিকার বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংগঠিত হবার অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্র কর্তৃক মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে কার্যকর করা। ট্রেড ইউনিয়ন শর্ত শিথিল করে সংগঠন করার অধিকার বিস্তৃত করা। দরকষাকষির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো নিশ্চিত করা।’

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সদস্য সংখ্যার সীমার শর্ত সহজীকরণে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্যসংখ্যার সীমার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকের অনুপাতের শর্তের পরিবর্তে ন্যূনতম শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনা করা। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অভিজ্ঞতা ও অনুসরনীয় মডেল বিবেচনা এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় পর্যালোচনা সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংখ্যা নির্ধারণ ও তৎপ্রেক্ষিতে দরকষাকষির প্রতিনিধি নির্ধারণসহ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা।’

সুপারিশ আরো বলা হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠানপুঞ্জের ক্ষেত্রে ৩০% সদস্যতার প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করে ন্যূনতম ৫০ জনে নামিয়ে আনা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ইউনিয়নের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক ইউনিয়নের জন্য সদস্যসংখ্যা ন্যূনতম ৫০ জন এবং জাতীয়ভিত্তিক ইউনিয়নের জন্য ন্যূনতম ৪০০ জন নির্ধারণ করা।’

স্বচ্ছ ও ন্যায্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। শ্রম অধিদপ্তরকে ৫৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে জবাবদিহি করতে হবে। কোনো ঘাটতি থাকলে ১২ দিনের মধ্যে লিখিত আপত্তি জানাতে হবে।

শ্রম অধিদপ্তরের ক্ষমতার যৌক্তিক প্রয়োগ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘আইনে ও শ্রম অধিদপ্তরকে কোনো ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রত্যাখ্যানের জন্য লিখিত ও আইনগতভাবে ন্যায্য কারণ দর্শানোর বিধান রাখা। নথিপত্রে ত্রুটির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন আবেদন প্রত্যাখ্যান না করা, বরং ইউনিয়নগুলোকে ত্রুটি সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া।’

শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘ইউনিয়ন সংগঠকদের বরখাস্ত বা হয়রানি করার জন্য শ্রম আইনে শাস্তি বৃদ্ধি করা। ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার রাখা এবং মামলাগুলো ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা। নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় কোনো কর্মকর্তা ও সদস্যকে নিয়োগকারী কর্তৃক যে কোনোভাবে চাকরির অবসান করার বিধান রহিত করা।’

সাধারণ সভার বিকল্প বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ঐচ্ছিক ক্ষমতা প্রয়োগের বৈষম্যমূলক পদ্ধতি অবসানের জন্য, ইউনিয়ন গঠনের সময় একটি প্রাতিষ্ঠানিক সভা আয়োজনের বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া এবং ইউনিয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিকল্প পদ্ধতি চালু করা।’

ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য ও সংগঠকদের সুরক্ষা বৃদ্ধি বিষয়ে বলা হয়েছে,  ‘শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৯৫ ও ১৯৬ (ক) সংশোধন করে ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য এবং সংগঠকদের সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া- যা অসৎ শ্রম অনুশীলন, যেমন- হয়রানি, হুমকি এবং ইউনিয়ন সংগঠক, সদস্য, কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি, অবসান বা বরখাস্তের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করবে। অন্যায্য শ্রম অনুশীলন সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আদালত ও শ্রম অধিদপ্তরের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং যদি শ্রম অধিদপ্তর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের জন্য একটি কার্যকর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখা।’