শিরোনাম
সিলেট, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : সিলেট অঞ্চলে এবার বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন হলেও বৃষ্টি এবং বন্যার শঙ্কায় দ্রুত ধান কাটছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে ৪৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ হাওরের ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ডিএই’র তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটের হাওরে আবাদ করা দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮০৩ হেক্টরের মধ্যে এক লাখ ২৪ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে ননহাওরে এখনও আধাপাকা ধান রয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ দশমিক ২১ শতাংশ ননহাওরের ধান কাটা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বাসসকে জানিয়েছেন, সিলেট অঞ্চলের হাওরে দ্রুত ধান কাটা হচ্ছে। যেসব ক্ষেতে ধান ৮০ ভাগ পেকেছে তা কেটে নিতে কৃষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ধানের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে না।
সিলেটে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে ধান কাটা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রায় চার লাখ কৃষক ও শ্রমিক ধান কাটায় ব্যস্ত। হারভেস্টার মেশিনের সংখ্যা বাড়ায় অনেকটা দ্রুত ধান কাটা যাচ্ছে। তবে, আরও এক সপ্তাহ বন্যা বা অতিবৃষ্টি না হলে হাওরের অধিকাংশ ধান কৃষকরা নিরাপদে ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা তার।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই বছর সিলেট অঞ্চলে চার লাখ ৯৭ হাজার ২১৯ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চলের মধ্যে হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্য পূরণ করে চাষীরা আবাদ করেছেন দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে হবিগঞ্জ জেলায়। এই জেলায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৩ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৮৪৭ হেক্টর। এছাড়া সিলেট জেলায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে ৮৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর। মৌলভীবাজার জেলায় ৬২ হাজার একশ হেক্টরের মধ্যে আবাদ হয়েছে ৬২ হাজার ২৩৫ হেক্টর।
সিলেট জেলার হাওরে আবাদ ৩৭ হাজার ২৯২ হেক্টর। এর মধ্যে কাটা হয়েছে ১৪ হাজার ৯১৭ হেক্টর। সুনামগঞ্জ জেলার হাওরে এক লাখ ৬৫ হাজার ২৪৩ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার হাওরে বোরো আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৯৫৩ হেক্টর জমিতে। কাটা হয়েছে ২১ হাজার ১২৯ হেক্টর জমির ধান এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৭ হাজার ৩১৫ হেক্টর আবাদ হয়েছে। এই জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত কাটা হয়েছে ১৪ হাজার ১২১ হেক্টর জমির ধান।
ননহাওরে এরই মধ্যে পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। যদিও এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ২১ হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। সিলেট কৃষি অফিস বলছে, ২ লাখ ২০ হাজার ৪১৬ হেক্টর ননহাওরের জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে, ২০ হাজার ১৭ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওর ও ননহাওর মিলে সিলেট অঞ্চলে ধান কাটার হার গড়ে ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টি ও বন্যা হলে হাওরের ধান সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিধায় হাওরে দ্রুত ধান কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল আজাদ বাসস’কে জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন হাওরের কৃষকরা। তাই, হাওরের ধান দ্রুত কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় প্রায় সাত শ’ মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক ধান কাটার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।