শিরোনাম
চাঁদপুর, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫( বাসস): জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ও ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের আওতায় মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এবং মেঘনার নদীর পশ্চিম পার্শ্বে ৫ কিলোমিটার জায়গায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি একসময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ কারণে চরম আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের মেঘনা ও ধনাগোধা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও প্রবল স্রোতে মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চ ঘাট থেকে সোনারপাড়া-সানকিভাঙ্গা, চরমাছুয়া-জনতা বাজার এবং ধনাগোদা নদীর ষাটনল থেকে কালীপুর, নবীপুর-হাফানিয়া-খাগুরিয়া, ঠেটালিয়া-সিপাইকান্দি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ের চরাঞ্চল এলাকার বোরচর, চরউমেদ, নাছিরারচরে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙ্গনের ফলে হুমকির মুখে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। হঠাৎ করে ধনাগোদা নদী ও মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে আরও শত শত বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালে সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই মূল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত দুবার এ বাঁধটি ভেঙে যায়। তখন কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয় অঞ্চলের মানুষের। পরবর্তীতে পুনরায় মেরামত করা হয় এ বেড়িবাঁধটি।
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাঙন কবলিত অঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজার দিয়ে দিনে রাতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হয়েছে। যার প্রভাবে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কালিপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন ও ইয়াকুব আলী জানায়, এ এলাকায় নদীর আচমকা ভাঙ্গনের ফলে বাজারের ব্যবসায়ী, স্থানীয় বসতি, কালিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালিপুর সপ্রাবি, কালিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফয়েহ আহম্মেদ মেমোরিয়াল হাসপাতাল হুমকির মুখে রয়েছে।হঠাৎ করেই এত তীব্র ভাঙন হবে যা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।
সোনারপাড়া এলাকার মো. মনির হোসেন খান, হেদায়েত জানান, দীর্ঘদিন মেঘনা নদীর জহিরাবাদ লঞ্চ ঘাট থেকে উত্তরদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখানে অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে নদীগর্ভ বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন কবলিত সিপাইকান্দি এলাকার ইউপি সদস্য একেএম গোলাম নবী খোকন জানান, সিপাইকান্দি ঠেটালিয়া অঞ্চলে ধনাগোদা নদীর দেড় কিলোমিটার ভাঙন এলাকায় ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে ব্লক নির্মাণ, জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা শুরু করেছে।
ভাঙ্গনকবলিত এলাকা ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম জানায়, এ যে মেঘনার পাশাপাশি ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল, কালিপুরসহ কয়েকটি অঞ্চল ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাই অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বালি মহলের নামে ইজারা দেয়া যা মতলবের জন্য খুবই হুমকির ও আতঙ্কের। আমার এলাকার মানুষ দিনরাত ভাঙন আতঙ্কে থাকছে।
খাগুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মঞ্জুর আমীন স্বপন জানায়, ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গনে খাগুরিয়া, হাপানিয়া ও নবীপুর এলাকার অনেক পরিবার ইতিমধ্যে জমি হারিয়ে পথে বসেছে। কখন যে নদী ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, হাট বাজার, ফসলি জমিসহ নদীতে বিলীন হয়ে যায় এ নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি। এমনকি মেঘনা ধনাগাদা বেড়ি বাঁধটিও ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহারকারী ফেডারেশনের সভাপতি রাসেল ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী শহীন জানান, এ মেঘনা ও ধনাগোদা নদীদে অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সেচ প্রকল্প আজ হুমকির মুখে। মেঘনা ও ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ঘেঁষা ধনাগোদা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি অঞ্চলে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
এ বিষয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের (পাউবো'র) নির্বাহী প্রকৌশলীর মো. সেলিম শাহেদ বলেন, মেঘনা ও ধনাগোদা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই। তবে নদীর তীর ও সেচ প্রকল্প বাঁধ রক্ষায় ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে আমরা সহসাই লিখিত অভিযোগ জানাবো।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। মেঘনা ও ধনাগোদা নদীতে অবৈধ বালি কাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করছি। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প ও এর তীর রক্ষায় এ নদীতে অবৈধ বালি কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।