বাসস
  ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০৪

খানসামায় বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল কৃষক নুরুল

দিনাজপুরের খানসামায় বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল কৃষক নুরুল। ছবি: বাসস

দিনাজপুর , ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): জেলার খানসামা উপজেলায় বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত সবজি চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন ২১ বছর বয়সের তরুণ কৃষক নুরুল ইসলাম।

জেলার খানসামা উপজেলা আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র তরুণ কৃষক নুরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, তার বাবা একজন কৃষক, তাকে তার বাবা কৃষি কাজ করে এইচ এস সি পাস করিয়েছেন। গত দু'বছর বিভিন্ন এনজিও এবং সরকারি দপ্তরে চাকরির আবেদন করে কোন চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি।

কৃষকের পুত্র হিসেবে সে নিজেকে সফল কৃষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কৃষিকাজ শুরু করেছেন।

তার বাবার ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে নুরুল ইসলাম সবার বড়। তার ছোট দুই ভাই, বোন ও মা জোহরা বেগম রয়েছে। ছোট ভাই রুবেল (১৫) দশম শ্রেণীতে এবং বোন রেবেকা আখাতার (১২) সপ্তম শ্রেণীতে স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা রয়েছে তার। সেটা সে সফল করতে চায়।

তিনি বলেন, কৃষিতে ভালো কিছু করার উদ্যোগ নিয়ে প্রথম ধাপে পার্টনার প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পেয়েছেন। তিনি জৈব পদ্ধতিতে চলতি রবি ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চিচিঙ্গা চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। তার উৎপাদিত বিষ মুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত সবজি স্থানীয় বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তিনি এখন এ উপজেলার কৃষকদের জন্য একটি বিষ মুক্ত সবজি চাষে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।

জেলার খানসামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় 'প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টার প্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)' প্রকল্পের সহাতায় তরুণ নুরুল ইসলাম বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেন। তাদের মাধ্যমে গঠিত ২৫ জন যুবকের সমন্বয়ে কৃষক গ্রুপের সদস্যদের দেওয়া হচ্ছে উত্তম কৃষি চর্চা (এঅচ) বিষয়ক প্রশিক্ষণ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের রবি মৌসুম থেকে প্রকল্পের অধীনে বায়োপেস্টি সাইড, ফেরোমন ট্র্যাপ ও আঠালো ফাঁদের ব্যবহার প্রদর্শন মূলক ভাবে শুরু হয়।

এরই অংশ হিসেবে কৃষক নুরুল ইসলাম তার ৩০ শতাংশ জমিতে বায়ো-পদ্ধতিতে চিচিঙ্গা চাষ করেছে। গত এক বছরে তার জমিতে অর্জিত বিষমুক্ত স্বাস্থ্য সম্মত সবজি বিক্রি করে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করেছেন। তিনি জানান, “পার্টনার প্রকল্পের প্রশিক্ষণ ও কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়মিত পরামর্শে আমি ভালো ফলন পেয়েছি। এখন অনেকেই আমার দেখা-দেখি বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এলাকার অনেক বেকার ও তরুণ-যুবকেরা বিষ পুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ তাদের সৃষ্টি হয়েছে ।

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “আমরা পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সম্মত কৃষি পদ্ধতিকে উপজেলায় সবজি চাষ যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। পার্টনার প্রকল্পের সহায়তায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে তরুণ কৃষকরা এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

তিনি বলেন, তরুণ কৃষক  নুরুল ইসলাম  এ পরিবর্তনের অগ্রনায়ক। তার সবজি চাষের সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকেরা আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রে বিষমুক্ত সবজি চাষসহ সব ধরনের কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়াচ্ছেন।

তরুণ কৃষক নুরুল ইসলামের এ সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত লাভ নয়, এটি উপজেলায় নিরাপদ খাদ্য ও টেকসই কৃষির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে তিনি ব্যক্ত করেন।