শিরোনাম
দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ২৬এপ্রিল, ২০২৫(বাসস) : প্রকৃতিতে ফিরেছে গ্রীষ্মকাল। বছর শুরুর এ ঋতু মৌসুমী নানা ফলের পাশাপাশি পুষ্পপল্লবেও জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতি। বাংলার প্রকৃতিতে সোনালু যেভাবে শোভা ছড়িয়ে চলেছে, তেমনি দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। সোনালুর সোনার আভায় সেজেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১০৫ কিলোমিটার অংশ পড়েছে কুমিল্লা জেলায়। এ মহাসড়কের দেখা গেছে, গাছের শাখা ছাপিয়ে ঝুমকার মতো ঝুলে আছে সোনালু। হলুদ সোনালুর অপরূপ শোভায় মন ছুঁয়ে যাবে যে কারও। মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম, মিয়ার বাজার, দাউদকান্দি, চান্দিনা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন অংশে শত শত গাছে সোনালু ফুল ফুটে রয়েছে। ফুলের সৌরভ আর মনমাতানো রঙে আকৃষ্ট হচ্ছেন চলাচলকারীরা।
দীর্ঘ একটা পথ চলাচলের সময় সোনালুর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যাত্রী ও চালকদের বিমোহিত করার পাশাপাশি ক্লান্তি নিমিষেই ভুূলিয়ে দেয় বলে জানান চালকরা।
মহাসড়কের সৌন্দর্যবর্ধন এবং রাতের বেলায় বিপরীত দিকের গাড়ির হেডলাইটের আলো যেন চালকের চোখে না পড়ে এ জন্য বিভাজকে বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি ফুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে হলুদ সোনালু ফুটে থাকায় মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন।
লাভ ফর বাংলাদেশ টুরিজম ক্লাব এর সভাপতি মীর মফিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে বিভিন্ন প্রজাতির যে ফুলগাছগুলো লাগানো হয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সারা বছর জুড়ে একেক সময় একেক ফুল ফুটে। আমরা যারা এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করি আমাদের কাছে এটা দেখতে অনেক বেশি ভালো লাগে। মনটা জুড়িয়ে যায়। এ সুন্দর কাজের জন্য অবশ্যই সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এমন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সবসময় যেন চলমান থাকে এবং নিয়মিত পরিচর্চা করা হয়। তিনি দাবি করেন, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফুলবাগানের মতো যেন সারাদেশের মহাসড়কগুলোতে এমন সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়। যাতে স্বস্তিতে যাত্রী ও চালকরা চলাচল করতে পারে।
মহাসড়কের পদুয়ার বাজার এলাকার বাসিন্দা সংবাদকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশ ১০৫ কিলোমিটার রাস্তায় বিভিন্ন ফুল ফুটে।
বর্তমানে সোনালু ফুল ফুটেছে। এ ফুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ও মোহনীয়। বাসা যাওয়ার পথে ফুল বাগানের ছবি তুলি, ভিডিও করি। এ সড়কে আসা যাওয়া পথে অনেক যাত্রীরা ছবি তোলে, পুলকিত থাকে। দেশের বিলুপ্ত প্রায় অনেক ফুল এ এ মহাসড়কে ফুটতে দেখা যায়। যা দেখে আমরা অনেক আনন্দিত হই।
কুমিল্লা-ঢাকা সড়কের তিশা বাসের চালক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, মহাসড়কে আগের এমন সুন্দর ছিল না। ছিলোনা এমন ফুল বাগান। বর্তমানে এসব বাগানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নান্দনিক ফুল ফুটে। যা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে। দেশের বিভিন্ন সড়কে আমরা গাড়ি চালাই কিন্তু এ সড়কের মত সুন্দর আর কোথাও দেখিনি।
এশিয়া লাইনের বাস চালক মনির হোসেন বলেন, এ মহাসড়কের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি দিনের বেলায় আর রাতের বেলায় এ বাগান গুলো থাকার কারনে বিপরীত পাশ দিয়ে আসা গাড়ীগুলোর হেডলাইট এর আলো থেকে আমাদের মুক্ত রাখে। ফলে অনেক দুর্ঘটনা থেকে আমরা বেঁচে যাই। সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় আমাদের অনেক যাত্রীর অনুরোধে প্রেক্ষিতে আমরা গাড়ি থামায়, পরে যাত্রীরা এ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে, ছবি তোলে, ভিডিও করে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আদনান ইবনে হাসান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে ফেনীর শুরু পযর্ন্ত ১০৫ কিলোমিটার কুমিল্লা সড়ক বিভাগের আওতায়। এ মহাসড়কের পুরোটা সড়ক বিভাজন জুড়ে আমরা বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগিয়েছে। গ্রীষ্ম বর্ষা হেমন্ত বসন্ত বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী ফুল গাছগুলো লাগানো। ফলে সারা বছর এ এ মহাসড়কে কোন না কোন ফুল ফুটে থাকে। ঢাকার তীব্র যানজট কাটিয়ে এসে যখন যাত্রীরা এ সড়কে প্রবেশ করে তখন তাদের ক্লান্তি নিমিষেই ভুলে যায় মহাসড়কের নান্দনিক মনমুগ্ধকর ফুলের সৌন্দর্য দেখে। বর্তমানে সোনালু ফুটে থাকায় মহাসড়কের সৌন্দর্য বেড়েছে। চলাচলের সময় মানুষ মুগ্ধ হচ্ছেন। আমরা ভবিষ্যতে আরো ফুল গাছ লাগানোর পাশাপাশি এগুলোর পরিচর্যা করাসহ আরো সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য কাজ করব।