বাসস
  ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৬

নেত্রকোনায় ভুট্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

নেত্রকোণায় ধান চাষের পাশাপাশি বিকল্প অর্থকরী ফসল ভুট্টা চাষ উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। ছবি: বাসস

নেত্রকোণা, ২৯ এপ্রিল,২০২৫(বাসস): জেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষকেরা ধান চাষের জমিতেই ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। ধান চাষের পাশাপাশি বিকল্প অর্থকরী ফসল ভুট্টা চাষ উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর শংকরপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, গত তিন বছর আগেও বোরো ধান আবাদ করতেন কিন্তু ধানের ফলন ভালো না হওয়ায় ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হতো। তাই তিনি ধান ছেড়ে ভুট্টা চাষ করছেন।

তিনি জানান, এ বছর তিনি ৯০ কাঠা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ভুট্টায় উৎপাদন খরচ কম হয় এবং তা আবাদ করে ফলন বেশি হয়। ভুট্টা বিক্রি করে লাভও পাওয়া যায় বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এ ফসলে লোকসানের ঝুঁকি কম। ভুট্টার চাহিদা অনেক বেশি থাকায় আগামীতে আরও বেশি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

একই গ্রামের আরে বেশ কয়েকজন কৃষকের  সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভুট্টা চাষে খরচ ধান চাষের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম তাই ধান চাষের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে এবং ভুট্টা চাষ করে লাভবান হওয়ার কথা জানান তারা।

গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন,"অনেকেই বড় পরিসরে ভুট্টা চাষাবাদ করেন তাদের আমরা বীজ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি না কিন্তু ভালো ফলন পেতে সার্বক্ষণিক নানা পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে থাকি।"

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস জানান "ধান চাষে সেচের বিষয়টি জড়িত বেশি, প্রচুর সেচ দিতে হয়। ভুট্টার ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সেচে ও কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা ভুট্টা চাষেই বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।"

তিনি আরও বলেন, ধান ছেড়ে যারা ভুট্টা চাষে করেছেন তাদের জন্য সামগ্রিক উৎপাদনে কোনোরকম পরিবর্তন হবে না। কারণ ভুট্টার চাহিদা রয়েছে, বাজার মূল্য থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাসসকে জানান, "আমাদের নেত্রকোণা জেলায় ভুট্টা এবং বাদামের আবাদ কম হয়। আমাদের এখানে দুটি পাহাড়ি উপজেলা আছে একটি দুর্গাপুর, অন্যটি কলমাকান্দা,এখানে পাহাড়ের পাদদেশে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পানির সমস্যা হয়। সেসব জায়গায় যেখানে পানির সমস্যা হয় সেখানে আমরা ভুট্টা, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা বিগত বছরগুলোতে ভুট্টা এবং বাদামে চাষের ক্ষেত্রে কৃষককে কৃষি প্রণোদনা  দিয়ে সহযোগিতা করেছি। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে এক বিঘা জমিতে চাষাবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছিল। আসলে যেহেতু আমাদের ভুট্টা এবং বাদাম আবাদ খুবই কম হয়, আমাদের কোন প্রণোদনা প্রোগ্রামে এ দুইটি ফসলের আওতায় কোন সহযোগিতা ছিল না। সে হিসেবে এ বছর আমরা কৃষকদের কিছু দিতে পারিনি তবে আমাদের এখানে কিছু প্রকল্প আছে । এ সব প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে ভুট্টা এবং বাদামসহ অন্যান্য যে সকল ফসলগুলো এলাকায় আবাদ করলে ভালো হবে। এ এলাকার উপযোগী সে ফসলগুলোর প্রদর্শনী আমরা দিয়ে থাকি । প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে প্রকল্প থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ তাদেরকে বিভিন্ন উপকরণ জীবন বীজ, সার এবং বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক প্রয়োজন হয় তাদেরকে আমরা এ প্রকল্প থেকে দিয়ে থাকি।"

চলতি মৌসুমে দুর্গাপুর উপজেলায় ভুট্টার আবাদ হয়েছে প্রায় ২৩ হেক্টর জমিতে। গো খাদ্যসহ নানা বিষয়ে চাহিদা রয়েছে এ ভুট্টার। তাছাড়াও ধান চাষে সেচের জটিলতা থাকায় ভুট্টা চাষে কম সেচের প্রয়োজন ও বাজার মূল্য ভালো পেয়ে লাভবান হওয়ার কারণেই এ ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।