শিরোনাম
॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে ফের মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ দুইমাস ভোলার মেঘনা,তেঁতুলিয়া, কালাবাদর, বেতুয়া ও ইলিশা নদীতে সরকার ঘোষিত সকল প্রজাতির মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলো।
এসময়টাতে এখানকার জেলেদের অনেক কষ্টে করে দিন পার করতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সময় হওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ভোলার জেলেরা। দিনরাত এক করে জাল, নৌকা মেরামতের কাজ শেষ করে আজ রাতেই মাছ শিকারে নদীতে নামছেন তারা। কাঙ্ক্ষিত মাছ শিকারে ধার-দেনা পরিশোধ করে স্বপ্ন দেখছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
ভোলার মৎস্য বিভাগ দাবি করছেন এবারের অভিযান সফল হয়েছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা সংরক্ষণের জন্য মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ভোলার ১৯০ কিলোমিটার নদীর জলসীমায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এসময় নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। এ দু'মাস অনেকটা বেকার জীবন কাটিয়েছেন এখানকার ১ লাখ ৭০ হাজার ২৪৩ জন নিবন্ধিতসহ মোট প্রায় ৩ লাখ জেলে। গত দুইমাস নদীতে একটানা মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার পর আজ মধ্যরাতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে। এজন্য মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ভোলার ৩ লাখ জেলে। তাই শেষ মুহূর্তে জেলেরা মাছ শিকারে যেতে জাল, নৌকা ও ট্রলার মেরামতে ব্যস্ততা ইতোমধ্যেই সেরেছেন।
এদিকে মৎস্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে নিষেধাজ্ঞা পালন করলেও অনেক জেলেই সরকারি বরাদ্দের চাল এখনো পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
তাই দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরার প্রস্তুতির পর এখন নদীতে নামার পালা জেলেদের। এদিকে এবার নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় নদীতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন ভোলার মৎস্য বিভাগ। ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব এ দাবি করেন। তিনি বাসস'কে জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন শুধু মার্চ মাসের বরাদ্দ পেয়ে ৮৯ হাজার ৭০০ জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এপ্রিলের চালের বরাদ্দ এখনো ছাড় না হওয়ায় বাকী চাল দেয়া হয়নি।
সূত্রমতে, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার এখানকার হতদরিদ্র ৮৯ হাজার ৬০০ জেলের জন্য চার মাসের ১৬০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এ চাল বেশির ভাগ জেলে পাননি বলে অভিযোগ জেলেদের। সরেজমিন ভোলার তুলাতুলি জেলেপল্লীতে গেলে কথা জেলে মালেক মাঝি, বাবুল মাঝি ও জয়নাল মাঝির সঙ্গে তারা অভিযোগ করেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন তারা খুব কষ্টে ছিলেন। সরকারী চাল এখনো পাননি। তবুও আজ রাত ১২ টা থেকে নদীতে মাছ ধরতে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। আবারো ভালো থাকার স্বপ্নের জাল বুনছেন-জেলে মালেক মাঝি, বাবুল মাঝি ও জয়নাল মাঝির মত উপকূলের প্রান্তিক জেলে সম্প্রদায়।
সূত্রমতে, মৎস্য বিভাগ এবছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছেন, ১ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ভোলা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞার সময়ে জাটকা ইলিশের অভয়াশ্রমে ৫৪০টি অভিযান পরিচালনা করেছে মৎস্য বিভাগ। তার মধ্যে মোবাইল কোর্ট ৬০টি। আটক করা হয়েছে জাটকা ০.৭৬৭৫ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য ৬.০৬০৫ মেট্রিক টন। মোট জাল আটক করা হয়েছে, ইলিশ ৫৪৭৯ লক্ষ মিটার, কারেন্ট জাল ৪৭.১৬২ লক্ষ মিটার এবং অন্যান্য জাল ১৪৭৩ টি। এ অভিযানে মোট মামলা হয়েছে ৬০টি, জেল হয়েছে ৬ জনের এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে ০.১৫০ লক্ষ টাকা। সরকারের নিলামে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা।