ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক যে, তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে এখানে গণহত্যা সংঘটনকারী তৎকালীন সামরিক জান্তাদের বিচার করেনি।
আজ রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যা’ শীর্ষক এক সেমিনারে যোগ দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পাকিস্তানি জান্তা (এখানে) গণহত্যা চালিয়েছে। (কিন্তু) কারও বিচার করা হয়নি .. এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক। তাদের উচিত ছিল (গণহত্যাকারীদের) বিচার করা।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রজন্ম একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করবে এবং বাংলাদেশে গণহত্যাকারীদের বিচার করবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল করা সম্ভব হয়েছে, অন্যথায় আমরা এটা করতে পারতাম না।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কোনো কোনো মহলের কারণে গণহত্যার বিষয়টি বহু বছর ধরে চাপা পড়েছিল।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা বিচারের বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে।’
ড. মোমেন বলেন, ২৫ মার্চকে ‘বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ঢাকা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা বাংলাদেশের গৌরবময় নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিনটিকে চিহ্নিত করে।
এই দিনতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা করেছিল।
সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এবং পুরো যুদ্ধের সময় হত্যার ধরণটির স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে বিশেষ করে ধর্ম, জাতি ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নির্মূল করা।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা শুধুমাত্র বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মহান ও বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, বরং সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া গণহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা।”
ড. মোমেন বলেন, বিশ্বের ভয়াবহ গণহত্যার শিকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের সূচনা থেকেই সারা বিশ্বের নিপীড়িত জনগণকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, এই নীতির ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত জাতি রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যান্টন এবং প্রখ্যাত গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. হেলেন জার্ভিস পৃথক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।