মাগুরা, ২৯ আগস্ট, ২০২২(বাসস) : জেলায় বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন হচ্ছেন কৃষকরা । এ জাতের পাট দেখতে লাল বর্ণের, আঁশ মোটা ও ফলন ভালো হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে এ জাতের পাট চাষ করেছেন কৃষকরা।
এ পাটের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে আগাম বীজ বপন ও ক্ষেত থেকে কাটাসহ এ পাটের জীবনকাল মাত্র ১১৫ থেকে ১২০ দিন। এ কারণে এ পাট চাষে ইতোমধ্যে জেলার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস এ পাট চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করার পাশাপাশি নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার কৃষকরা প্রায় ৩ বছর বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) এর চাষ শুরু করেছেন। এ পাট গাছ সাধারণ পাট গাছ থেকে কিছুটা লম্বা হয়। মাগুরা জেলায় এ বছর ২৫০ হেক্টর জেিমত বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) চাষ হয়েছে । আগামীতে এ চাষ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। এ পাট চাষ জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ জাতের পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এটি অপেক্ষাকৃত উচু, জলাবদ্ধতাহীন দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষের উপযোগী। স্বাভাবিক গড় উচ্চতা প্রচলিত জাত অপেক্ষা ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। উন্নততর আঁশ বিশিষ্ট এ পাট অধিকতর উজ্জল এবং শক্ত।
জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘুল্লিয়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী জানান, তিনি ৫০ শতক জমিতে এ পাটের চাষ করেছেন। তিনি ৫০ শতক জমি থেকে প্রায় ১৬মন পাট ঘরে তুলেছেন। এ পাটের ১ কেজি ৬০০ বীজ তিনি সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় কৃষক বকুল জোয়ার্দারের কাছ থেকে। এ চাষে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ভালো দামে পাট বিক্রি করে লাভোবান হবেন বলে তিনি আশা করছেন।
মাগুরা সদর উপজেলা আঠাখাদা গ্রামের কৃষক টিটুল বিশ্বাস জানান, তিনি এ বছর ৩৩ শতক জমিতে এ জাতের পাট চাষ করছেন। তিনি মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৭৫০ গ্রাম পাট বীজ সংগ্রহ করছেন। তিনি জানান, আমরা সাধারণ জাতের যে পাট চাষ করি তার তুলনায় এ পাটে কিছুটা লম্বা ও আঁশ মোটা হয়। পাটের রঙও বেশভালো হয়।
বিনোদপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দাস জানান, এ ইউনিয়নে ৮৫ হেক্টর বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) জাতের পাট চাষ হয়েছে। এ পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাট কেটে পানিতে দেয়ার পর স্বল্প সময়ে জাগ আসে। ফলে কৃষকরা সহজেই আঁশ সংগ্রহ করে শুকিয়ে তা ঘরে তুলতে পারে। স্থানীয় কৃষকরা নিজেরাই এ জাতের পাট বীজ উৎপান করে তা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এ পাটের গুনাগুন ও ফলন দেখে দিন দিন কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
মাগুরা সদর উপজেলার আঠারখাদা ইউনিয়নের উপ-সহকার ী কৃষি কর্মকর্তা লব কুমার রায় জানান, অন্য জাতের তুলনায় এ জাতটি কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত বীজ পেলে আগামীতে আরো অনেক বেশি আবাদ হবে।
উল্লেখ্য, এ বছর মাগুরা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যত্রামা ছিল ৩৫ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ হাজার ৬৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ হাজার ৪৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর, শালিখায় ৩ হাজার ৯৩৫ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলা ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সাধরণ জাতের পাট চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৯১২ বেল পাট উৎপাদিত হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, চলতি বছর জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে । এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) চাষ হয়েছে। এ জাতের পাট চাষ কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে। এ পাটের বৈশিষ্ট হচ্ছে আগাম চাষ করা যায়,রোগ ব্যধি কম হয় এবং একটু দেরিতে কর্তন করলেও এ জাতের পাট শুকিয়ে মারা যায় না। ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে জমি থেকে পাট কাটতে পারলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের পাটের বীজ বেশি করে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভোবান হবেন। আমরা মনে করি আগামীতে বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) জাতের বীজের সহজ লভ্যতার পাশাপাশি এ জাতের পাটের চাষ আরো বাড়বে।