বাসস
  ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪০

গোপালগঞ্জে ১০০ শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি সৌধ সংরক্ষণ 

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত রাখতে গোপালগঞ্জে ১শ’ শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধিসৌধ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজম্মের এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়  গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ।
গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন,  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় ১১৫টি স্মৃতিসৌধ সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হয়। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫৭ টি, কাশিয়ানীতে ২৯টি, মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ২৯টি সমাধিসৌধ সংরক্ষণ করার কাজ হাতে নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ৫ উপজেলায় ১০০টি সমাধিসৌধ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আরো ১৫টি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আমরা দ্রুত এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করব।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু বলেন, শহীদ ও অন্যন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান। জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অম্লান স্মৃতি ধরে রাখতে তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করছেন। মুক্তিযোদ্ধা সমাধিসৗধ করে দিচ্ছেন। এগুলোর উন্নয়ন করছেন। এরমধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও অবদানের কথা জানতে পেরে নতুন প্রজন্ম গর্বিত হবে। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হবে। এ মহৎ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
শহীদ পরিবারের সদস্য গোপালগঞ্জ শহরতলীর ঘোষেরচর দক্ষিণপাড়া গ্রামের এস.এম মাহফুজ বলেন, আমার চাচা আব্দুল লতিফ শেখ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধু আমাদের গ্রামেরবাড়ি ঘোষেরচর দক্ষিণপাড়া গ্রামে অসংখ্য বার এসেছে। আমার দাদা সলিম উদ্দিন শেখ ও দাদী জিন্নাতুন্নেছা বঙ্গবন্ধুকে ¯েœহ করতেন। চাচা লতিফের সাথে বসে এক সাথে আমাদের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু খাবার খেয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ট  আমাদের পরিবারের সদস্যরা  মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা শুরু করেন। আমার বাবা রুস্তুম আলী শেখ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। চাচা আব্দুল জলিলও মুক্তিযুদ্ধে অবদন রেখেছেন। আমাদের পরিবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার  বড় ভাই  মণি মিয়া শেখ  সে সময়  গোপালগঞ্জ এস.এম মডেল হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণিতে পড়তো। সুঠাম দেহের অধিকারি মণি মিয়াকে পরিবারের সবাই অত্যন্ত ¯েœহ করতেন। মণি মিয়া রাজাকার ও পাকবাহিনীর খবরা খবর মুক্তিযোদ্ধাদের দিতেন।  খাবার এগিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন। আমার চাচা আব্দুল হাই শেখ ওরফে কুটি মিয়া গোপালগঞ্জ শহরের চৌরঙ্গীতে ওষুধের ব্যবসা করতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা মূল্যে ওষুধ দিতেন। অপর চাচা আব্দুল আসাদ শেখ শহরে মুদি ব্যবসা করতেন। তিনিও দোকান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা পয়সায় মুদি ও মনোহারী সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করতেন। ১৯৭১ সালে জুন মাসের মাঝামাঝিতে সকালের দিকে বাড়ির পাশ থেকে মণি মিয়াকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে পাক বাহিনীর কাছে তুলে দেয়। ওই দিন বিকেলে  আমার চাচা ওষধ ব্যবসায়ী আব্দুল হাই শেখকে রাজাকাররা গিয়ে বলে তুমি ক্যাম্পে গিয়ে ধরা দিলে পাক বাহিনী মণি মিয়াকে  ছেড়ে দেবে। সরল বিশ্বাসে তিনি ¯েœহ ভাজন ভাতিজাকে ছাড়াতে যান। কিন্তু তার পর থেকে আর মণি মিয়া তার চাচা আব্দুল হাই শেখের কোন সন্ধান মেলেনি। আগষ্ট মাসের দিকে আমার  চাচা মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল আসাদকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তিনিও নিখোঁজ হন। বঙ্গবন্ধুর সহচর আব্দুল লতিফ শেখ ভরতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন। অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে ট্রেনিং শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় টিম নিয়ে টিম লিডার হিসেবে আব্দুল লতিফ শেখ বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পাক বাহিনীর সাথে তাদের টিমের একাধিক যুদ্ধ সংগঠিত হয়। কোন একযুদ্ধে আব্দুল লতিফ শহীদ হন। তাদের লাশ আমরা পাইনি। তাদের অম্লান স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে ৪টি স্মৃতিসৌধ করে দিয়েছে। এ স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে তাদের বীরত্বগাঁথা  নতুন প্রজন্মের কাছে প্রজ্জ্বলিত  হবে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নওশের আলী ওরফে নশু শেখ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মূল্যায়ন করেছেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর আমাদের অবমূল্যায়ন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। অন্যন্য সুবিধা দিচ্ছেন। এখন শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাধাঁই করে দিয়েছেন। সেই সাথে সমাধিসৌধ করে দিচ্ছেন। এটি আমাদের অনন্য পাওয়া। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।