বাসস
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:১৪
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৪

যশোরের তৈরি কার্নেল পুষ্টি চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে

যশোর, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলায় তৈরি কার্নেল মিশ্রিত পুষ্টি চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।সরকারের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় যশোরের চারটি উপজেলার দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ পুষ্টি চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।যন্ত্রের সাহায্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ ফরটিফায়েড রাইস কার্নেল (চালের মতো দানা) তৈরি হচ্ছে যশোরে। পরে এটি সাধারণ চালের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে পুষ্টি চাল। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কার্ডের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের পুষ্টির অভাব পূরণে এ চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
যশোর বিসিক শিল্পনগরীতে জাহান ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে কার্নেল মিশ্রিত চাল তৈরি করা হচ্ছে। যশোরে গড়ে তোলা জাহান ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত চালের বাজারজাতকরণ গত বছরের (২০২১ সাল) নভেম্বর মাসের শুরুতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহযোগিতায় ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে উদ্বোধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। জাহান ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বাজারের সাধারণ চাল যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে গুঁড়া বানানো হয়। এরপর বিদেশ থেকে আমদানি করা ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও জিংক এই ছয়টি পুষ্টিকনা আরেকটি যন্ত্রের মাধ্যমে ওই গুঁড়ার সঙ্গে মেশানো হয়।এবার বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করে আরেকটি যন্ত্রের সাহায্যে চালের মতো দানা তৈরি হয়।ওই দানা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শুষ্ক করে ২৫ কেজির বস্তায় প্যাকেটজাত করে বাজারজাত করা হয়।
জাহান ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার শামীউল ইসলাম বলেন, একার্নেল বা চালের মত দানা সরাসরি রান্না করে খাওয়া যায় না। সাধারণ চালের সঙ্গে নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশিয়ে রান্না করে ভাতের মতো খেতে হয়।যেটা পুষ্টি চাল নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।সাধারণ চালের তুলনায় এই চালের দাম তিন থেকে চার টাকা বেশি।এতে ভাতের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। শামীউল ইসলাম আরো জানান, খুলনা বিভাগে একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানেই কার্নেল মিশ্রিত পুষ্টি চাল তৈরি হচ্ছে।
পুষ্টিবিদ ও উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কাছে থেকে জানা যায়, ছয়টি পুষ্টিকণা মিশ্রিত এ পুষ্টি চাল নিয়মিত খাওয়া হলে রোগ সংক্রমণ ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ এবং শিশুদের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। গর্ভস্থ শিশুর জন্মবিকৃতি কমে, কম বয়সী শিশুর মূত্রনালি সুগঠিত হয়, শরীরে লোহিত রক্তকণিকা গঠন ও রক্তস্বল্পতা দূর করে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ কেজি চালে ১ কেজি হারে কার্নেল মেশাতে হয়। এটা মেশিনে অটোমেটিক গড় করে দেয়। এ চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় কিন্তু এ চালের ভাতের স্বাদে কোনো পরিবর্তন হয় না।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ও খাদ্যবন্ধব কর্মসূচির আওতায় যশোরের চারটি উপজেলার দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ পুষ্টি চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণ চালের সঙ্গে কার্নেল মিশিয়ে এ চাল সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে যশোর সদর, চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় এ চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল আলীম জানান, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এ দেশের মানুষের শরীরে ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, আয়রন, জিংক ও ফলিক অ্যাসিডের ছয়টি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঘাটতি বেশি। ফলে তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে রোগবালাই বেশি দেখা দিচ্ছে। মানুষের শরীরে এ ছয়টি পুষ্টিকণার ঘাটতি পূরণের ভাবনা থেকেই কার্নেল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তি উদ্যোগে যশোরেও একটি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হয়েছে। যেটি খুবই আশাব্যঞ্জক।