শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : ভোজ্য তেলের দাম ভালো থাকায় গোপালগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্ত জেলার ৫ উপজেলায় ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
জেলার সরিষা ক্ষেতগুলো এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙে রঙ্গিন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও কৃষকরা এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন। মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুল এমনই আভা ছড়াচ্ছে। আর প্রকৃতি প্রেমিকরা হলুদ সরিষা ক্ষেতে বেড়াতে আসছেন। ফুলের রাজ্যে কিছুটা সময় কাটাচ্ছেন। তুলছেন ছবি। এছাড়া মৌ-চাষিরা এখান থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। সরিষাক্ষেত ঘিরে এখন মৌ-চাষিদের জমজমাট বাণিজ্য চলছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর জেলার ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ভালো রয়েছে। আবার সরকারও ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তেল ফসলের চাষ বৃদ্ধির আহবান জানায়। তাই কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ করেছেন। এ জেলায় এ বছর মোট ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৬২ হেক্টরে, মুকসুদপুরে ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টরে, কাশিয়ানীতে ১ হাজার ১৭০ হেক্টরে, টুঙ্গিপাড়ায় ৩০০ হেক্টরে ও কোটালীপাড়া উপজেলায় ২০০ হেক্টরে সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন সরিষা ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। প্রতিটি ক্ষেতেই সরিষার অবস্থা বেশ ভালো। আশা করা হচ্ছে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এখান থেকে মৌ-চাষিরা মধু সংগ্রহ করছেন। ক্ষেতে মৌমাছি থাকলে ফুলের পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে সরিষার ফলন বেড়ে যায়। এতে একদিকে যেমন মৌ-চাষি মধু সংগ্রহ করে লাভবান হন। তেমনি সরিষার বেশি ফলন পেলে কৃষক উপকৃত হন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক নায়েব আলী চৌধূরী বলেন, এ বছর বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেশ চড়া। তাই নিজের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে ১ একর জমিতে সরিষার চাষ করেছি। মাঠে সরিষা ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব। নিজের পরিবারের তেলের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত সরিষা বাজারে বিক্রি করব। আগামীতে আর ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করব না। সারা বছর সরিষার তেল ভোজ্য তেল হিসেবে খাব।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাশুর গ্রামের মৌ-চাষি ওহিদ মোল্লা বলেন, আগে গোপালগঞ্জে সরিষার আবাদ তেমন ছিল না। অন্য জেলায় গিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হত। এখন গোপালগঞ্জে সরিষার চাষ বেড়েছে। তাই এখান থেকে মধু সংগ্রহ করছি। আগে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স বসালে কৃষক অসহযোগিতা করত। তার মনে করত ফুলে মৌমাছি বসলে সরিষার ফলন কমে যাবে। ক্ষেতে মৌমাছি বাক্স বসালে কৃষক সরিষার ভালো ফলন পেতে শুরু করেন। এখন তাদের সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এ কারণে সরিষা ক্ষেত থেকে নির্বিঘেœ মধু সংগ্রহ করছি। সরিষার ক্ষেতেই এখন জমজমাট মধুর ব্যবসা চলছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তালা গ্রামের শেখ সারহান হোসেন বলেন, আমি পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকা থাকি। শীতে গ্রামে এসেছি পিঠা খেতে। সঙ্গে বউ ছেলে-মেয়ে এসেছে। বাড়ির পাশের ক্ষেত গুলোতে সরিষা ফুল ফুটেছে। এটি নয়নাভিরাম শোভা ছড়াচ্ছে। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাইকে নিয়ে ক্ষেতে এসেছি। আমাদের এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। সরিষা ফুলের সাথে ছবি তুলছি। এতে ভালো সময় কাটছে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায় বলেন, এ জেলার মূল ফসল ধান ও পাট। গত বছর এজেলায় মাত্র ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ বছর সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রণোদনা পেয়ে ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে কৃষক সরিষার আবাদ করেছে। বাজারে ভোজ্য তেল ও সরিষার বেশ ভালো দাম রয়েছে। কৃষক এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন পেয়ে লাভবান হবেন। আগামীতে এ জেলায় তেল জাতীয় ফসলের আবাদ আমরা আরো বৃদ্ধি করব। এভাবে আমরা ভোজ্য তেলের আমাদানী নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।