বাসস
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪২
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৪

মধুমতি নদীর সঙ্গে কংশুরে খালের সংযোগ: ধানের উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার টন

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলার মধুমতি নদীর সঙ্গে দীর্ঘ ৫৫ বছর পর কংশুরে খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে গতকাল। সংযোগ স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।এই সংযোগের ফলে চাষাবাদের আওতায় আসবে জেলার ৩৫টি গ্রামের ১ হাজার ৫০০ একর জমি। এতে  ধানের উৎপাদন বাড়বে ১০ হাজার টন।
কংশুরে খালের মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ ছিলো। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ সালে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের (কাটা মধুমতি নদী) ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় এই খালের মুখটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া, দূর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি  ইউনিয়নের অন্ততঃ ৩৫টি গ্রামের কৃষক চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব গ্রামের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন খালটি নদীর সাথে সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পরে ২০০ মিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়।  
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুন্নাহার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহসিন উদ্দীন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মামুন খান, উলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বাবুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের কংশুর গ্রামের কৃষক মো. ফুল মিয়া খান(৪৫) বলেন, পানির অভাবে আমাদের চাষাবাদ করতে সমস্যা হতো। স্যালো দিয়ে পানি তুলে চাষাবাদ করতে হত। অনেক জমি পানির অভাবে অনাবাদি থাকতো এখন নদীর সাথে খালে সংযোগ হওয়ায় আমাদের সব জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে।
একই গ্রামের কৃষক মো. হাফিজুর মোল্লা (৫৫) বলেন, জমির পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা না থাকায় এসব এলাকার কৃষি জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই খালটির সাথে ১২টি খালের সংযোগ রয়েছে। নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এই সব ইউনিয়নে আনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে ফসল উৎপাদন বাড়বে। এখন আর ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করতে হবে না। ফসল উৎপাদনে সেচ খরচ কমবে।
করপাড়া ইউনিয়নের বনগ্রামের কৃষক একরাম আলী খান(৬৫) বলেন, এখন থেকে খাল পাড়ের বাসিন্দারা খালের পানি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ করতে পারবে। চাষাবাদে ব্যবহার করতে পারবেন কংশুর খালসহ এই খালের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য খালের পানি সরবরাহ বাড়বে। এতে কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
করপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নোয়াব আলী ফকির বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো এই খালটির বন্ধমুখ নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা ।দীর্ঘ ৫৫ বছর পর এলাকাবাসীর দাবি পুরণ হলো। এতে এলাকাবাসী খুশি। এলাকার কৃষকদের মধ্যে খুঁশির আমেজ বিরাজ করছে।
স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম নজরুল ইসলাম বলেন, এই খালটির বন্ধ মুখ নদীর নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় করপাড়া, দুর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের অন্ততঃ ৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকদের জন্য আশির্বাদ হয়েছে। খালটির মুখ বন্ধ থাকায় এসব ইউনিয়নের অনেক জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে সেচ দিতে পানির সংকটে পড়তে হতো এলাকার কৃষকদের। এখন আর পানির সংকট হবে না। এখন সকল জমি চাষের আওত্তায় আসবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, এই খালটির মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ ছিলো। এখন খালটি নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেয়া হলো। এতে খালটিতে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মওসুমে সেচ কাজে এই খালে পানি ব্যবহৃত হবে। আগে ভুগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। অনাবাদী ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। এতে অন্তত ১০ হাজার টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এলাকায় চাষাবাদের উন্নয়ন ঘটবে। অনাবাদি জমিতে আবাদ হবে। এতে বাড়তি ফসল উৎপাদিত হবে। দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।