শিরোনাম
॥ আব্দুল খালেক ফারুক ॥
কুড়িগ্রাম, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামেও খুশি এ অঞ্চলের মরিচ চাষিরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ভরা মৌসুমে মরিচের ভালো দাম পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন মরিচ চাষিরা। প্রতি বছর চাষিরা মরিচের চাষাবাদ করে বদলে দিয়েছে নিজের ভাগ্যের চাকা। ক্ষেতের মধ্যেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করতে পেরে স্বস্তিও পেয়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। মরিচের ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় শত শত পাইকার ওই সব প্রান্তিক কৃষকদের কাজ থেকে মরিচ ক্রয় করে কুড়িগ্রাম জেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাট, বড়বাড়ী ও মোস্তফি মরিচের হাটে ক্রয়কৃত মরিচ বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা, গোরকমন্ডপ, চর-গোরকমন্ডপ, বালাটারী, কুরুষাফেরুষা, গজেরকুটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলনসহ মরিচের ভালো দাম থাকায় চাষিরা মরিচ ক্ষেতে পরিচর্যা কাজ ব্যস্ত সময় পার করছেন, আবার কেউ ক্ষেতের মরিচ তুলছেন, অনেকেই আবার মরিচ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। শত শত বিঘা জমিতে প্রচুর পরিমানে মরিচের চাষবাদ করেছেন চাষিরা। যে সকল চাষির নিজস্ব কোন জমি নেই, তারাও অন্যের জমি লিজ (কন্ট্রাক) নিয়ে মরিচসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্থানীয় পাইকাররা (ব্যবসায়ী) ক্ষেতের ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে মরিচ ক্রয় করে ট্রাক-অটোরিকশা ও ভ্যান যোগে কুড়িগ্রাম জেলা শহর, উলিপুর ও লালমনিরহাট শহর, বড়বাড়ী এবং মোস্তফি বাজারে গিয়ে দেশের দূর -দূরা ন্তের পাইকার (ব্যবসায়ীদের কাছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে মরিচের মণ বিক্রি করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার গজেরকুটি গ্রামের মরিচ চাষি আলহাজ্ব মজিবর হোসেন জানান, তিনি গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে আসছেন। তিনি প্রতি বছর পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচের চাষবাদ করেন। এবছরও পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচ চাষবাদ করে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন। তিনি জানান আরো জানান, মরিচ একটি লাভজনক ফসল। এক বিঘা জমিতে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্য বছর গুলোতে বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে এক বিঘা জমিতে মরিচ বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। এ বছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম থাকায় ১ বিঘা প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা মরিচ বিক্রি করে আয় হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি চার বিঘা জমির মরিচ ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা দরে ক্ষেতেই স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন।
উপজেলার পূর্বফুলমতি এলাকার মরিচ চাষি তৈয়ব আলী জানান, তিনি গত ২০ দিন আগেই এক বিঘা জমির মরিচ ক্ষেতই ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি আগাম মরিচ বিক্রি করায় এক বিঘা জমিতে খরচ মিটিয়ে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেছেন। তিনি আরো জানান, গত বছর ভরা মৌসুমে ১ মণমরিচ বিক্রি করেছি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এবছর মরিচের ভরা মৌসুমেও চাষিরা ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মরিচের মণ বিক্রি করছেন।
স্থানীয় পাইকার (ব্যবসায়ী) বিপুল মিয়া ও হাসেন আলী জানান, মরিচের চাহিদা ও দাম ভালো থাকা কৃষকদের পাশাপাশি তারাও লাভের মুখ দেখছেন। গত বছরের চেয়ে চাষিদের দ্বিগুণ আয় হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চলতি মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলায় ১ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে কৃষকরা মরিচের চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের ভালো দাম পেয়েও খুশি হয়েছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগ মরিচ চাষিদের বিভিন্ন ধরণে পরামর্শ প্রদানসহ সহায়তা করা হয়েছে।