শিরোনাম
// রোস্তম আলী মন্ডল //
দিনাজপুর, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলার খানসামা উপজেলা পল্লীতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে দুইজন কৃষক তাদের জমিতে গাছ আলু চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার খামারপাড়া ও টংগুয়া গ্রামের দুইজন কৃষকের চাষ করা গাছ আলুর ক্ষেত পরিদর্শন করেন আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ। তিনি জানান, গত নভেম্বর মাসে ঝিনাইদহ থেকে সংগ্রহ করা গাছ আলুর বীজ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের মাধ্যমে খামারপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান এবং টংগুয়া গ্রামের কৃষক খয়রাত আলীকে তাদের জমিতে লাগানোর জন্য দেয়া হয়। বিলুপ্ত প্রায় এই গাছ আলু জমিতে জৈব সার ও গোরব সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করে গাছ আলুর বীজ রোপন করা হয়। গত আড়াই মাসে ওই জমিতে লাগানো গাছ আলু বেড়ে উঠতে আলু ব্যাপক হারে ধরেছে। কোন কোন আলু ৭ থেকে ৮ কেজি ওজনের হয়েছে।
আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক গাছ আলুর চাষের সফলতা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, জেলার সব উপজেলাতে এই আলু স্বল্প খরচে কৃষকেরা চাষ করে জেলার তরকারীর চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো সম্ভব। এ আলু চাষে খরচ অনেক কম। তদারকি এবং কৃষকের পরিচর্যায় আলুর বীজ রোপনের দেড় মাস পর থেকে আলু গাছে ধরতে শুরু করেছে। আলু বড় হয়ে ৭ থেকে ৮ কেজি ওজনের হয়েছে। অর্জিত আলু বিষ মুক্ত এবং সুস্বাদু পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে কৃষি বিভাগ তাদের গবেষণায় ফলাফল পেয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই আলু আবারো কৃষকদের চাষ করে দেশের ভাতের সাথে তরকারীর চাহিদা পূরণে ব্যাপক সহায়তা আসবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছেন।
তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই গাছ আলু আগে কোন চাষ ছাড়াই বাড়ির আশপাশ বোপঝাড়ে এবং আঙ্গিনায় কোনায় আপনা-আপনি হয়ে উঠত। এ আলু মানুষ মাছের সঙ্গে তরকারী, ভাজি ভর্তা এবং মাংসের সাথে মিশিয়ে সুস্বাদু তরকারী রান্না করে খেত। জমির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ির আশ-পাশ আর পূর্বের মত জঙ্গল বা ঝোপঝাড় না থাকায় গাছ আলু বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগের গবেষণায় এই আলুর পূণরায় উৎপত্তি হয় ঝিনাইদহ জেলায়। সেখান থেকে ওই অঞ্চলের জেলা গুলোতে এখন গাছ আলুর চাষে কৃষকেরা সফলতা পেয়েছে। দিনাজপুরে এই আলুর চাষে উৎসাহ বাড়াতে কৃষি বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণে প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে।
খানসামা উপজেলার কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা ফয়সাল হাবিব জানান, সময়ের সাথে কৃষিতে এসেছে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভূমির ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়ার ফলে গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আঙিনা ও ঘরের পাশে ঝোঁপ-ঝাড়ও হারিয়ে যাচ্ছে। সে কারনেই এসব স্থানে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হওয়া পুষ্টিগুণে ভরা গাছ আলু বিলুপ্তির হয়ে গিয়েছিল।
পুষ্টিসমৃদ্ধ ও লাভজনক ফসল গাছ আলুর চাষ ধরে রাখতে কৃষি প্রধান এই জেলার খানসামা উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভিত্তিতে গাছ আলু চাষ হয়েছে। প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া প্রতি পিস গাছ আলুর ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি। যা নিয়ে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়েছে।
সুত্রটি জানায়, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় চলতি মৌসুমে ২০ শতক করে ৪০ শতক জমিতে দুইজন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছে। এছাড়াও অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট পরিসরে গাছ আলুর শুরু করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খামারপাড়া ও টংগুয়া গ্রামে কৃষি বিভাগের সহায়তায় ঝিনাইদহের স্থানীয় জাতের গাছ আলু চাষ করেছে কৃষকেরা। ২০ শতকে জমিতে প্রায় ২ টন ফলনের আশা করছে তারা। এই গাছ আলুর প্রতি কেজির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০ টাকা। অল্প টাকা ব্যয়ে এমন লাভে কৃষকরা খুশি। এই গাছ আলু ওল, গোল আলু এসব সবজির মতই ভর্তা, মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায় আলুটি খুব সুস্বাদু ও মুখরোচক। তাই বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
গাছ আলু চাষী কৃষক খয়রাত আলী বলেন, অল্প খরচে অধিক লাভের আশা। নিয়ে কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় ২০ শতক জমিতে গাছ আলু লাগিয়েছি। এই ফসলে উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২ টনের অধিক গাছ আলুর ফলন আশা করছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
খামারপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান বলেন, গাছ আলু চাষ করে অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশী। সেই সাথে স্থানীয় বাজার ও অন্য এলাকায় চাহিদা থাকায় গাছ আলু চাষ অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে।