শিরোনাম
॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস): জেলা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ২১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৫০ হেক্টর জমি পতিত চাষাবাদের আওতায় আনছে।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ২১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার পতিত ২৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনছে। ইতিমধ্যেই ১৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা, মিষ্টি আলু, গোলআলু, আখ, লতিরাজ কচু, তরমুজ, বাঙ্গি, চিচিঙ্গা, পেঁপে, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ, কালজিরা, সূর্যমুখী, মসুর, খেসারী, মুগ, মটর, মাসকলাই, শশা, খিরা, সবজি ও পানের আবাদ করা হয়েছে। বাকি ১০৫ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম ও বোরো ধানসহ রবি মৌসুমের ফসল চাষাবাদ চলছে দ্রুত গতিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান হিটু গাজী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উৎসাহে পতিত ১ একর জমিতে এ বছর আখ, আলু, সবজি ও লতিরাজ কচুর চাষ করেছেন। তিনি গত ডিসেম্বরে তার পতিত জমিতে এসব ফসল চাষাবাদ করেছেন। হিটু গাজী বলেন, পিতার পেশা ছিল কৃষি। আমরা জমি বর্গাচাষী দিয়ে চাষাবাদ করাতাম। ৩০ বছর ধরে বাড়ির আশপাশের অন্তত ১ একর জমি পতিত পড়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও পতিত না রেখে চাষাবাদের আওতায় আনতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি খাদ্য উৎপাদন বদ্ধির আহবান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার ও চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিটন কান্তি সরকার বার-বার আমার কাছে এসেছেন। তারা পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে অনুরোধ করেছেন। তাদের পরামর্শে ৩০ বছর ধরে পতিত পড়ে থাকা ২০ শতাংশ জমিতে আখ, ২৫ শতাংশে গোল আলু, ৩০ শতাংশে লতিরাজ কচু ও ২৫ শতাংশে সবজির আবাদ করেছি। পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ২৫ হাজার টাকার শাক, সবজি বাজারে বিক্রি করেছি। আলু, আখ ও লতিরাজ কচু থেকে ও আমার ভাল আয় হবে। কৃষি সম্প্রসারণ পতিত জমিতে ফসল চাষাবাদ শিখিয়েছে। কিভাবে এখান থেকে আয় করতে হয় তাও তারা দেখিয়ে দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি আমরা খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয়ের সুযোগ পেয়েছি।
এইভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমার মত বিভিন্ন কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েছেন। তাদের পতিত জমি চিহ্নিত করেছেন। ওইসব পতিত জমির উপযোগী ফসল তারা তাদের দিয়ে চাষাবাদ করিয়েছেন। তাদের এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিটন কান্তি সরকার বলেন, আমরা রবি মৌসুমের অনেক আগেই পতিত জমি চিহ্নিত করি। পরে এইসব জমিতে চাষাবাদ করার জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করি। তারা আমাদের এই কর্মকান্ডে ব্যাপক সাড়া দেন। এই কারণেই পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। কৃষক আমাদের পরামর্শে চাষাবাদ করেছেন। তাই তাদের মাঠের ফসলের অবস্থা বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। তারা সবজি বিক্রি করে এখন আয় করছেন। কিছুদিনের মধ্যে সরিষা ও আলু সহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। তারপর তারা এসব জমিতে বোরোধান ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করবেন। কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা রয়েছে। তাই সরকার প্রধানের নির্দেশনায় কৃষকরা পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছেন। এ কারণে এই মৌসুমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, আমরা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পতিত ২৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করি। কৃষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা এগুলো চাষাবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। কৃষকদের প্রণোদনা, কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। পতিত এসব জমিতে চলতি রবি মৌসুমে অন্তত ১০ কোটি টাকা মূল্যের ফসল উৎপাদিত হবে। এরমধ্যে দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির দিক নির্দেশনা পুরণ করতে সক্ষম হবো। দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। কৃষি, কৃষক ও বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।