শিরোনাম
॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় কয়েক বছর আগেও শুটকির এত চাহিদা ছিলোনা, এখন দিন-দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে শুটকির। এখন শুটকির বাজার বেড়েছে কয়েক গুণ।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে শুটকির উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় তৈরিকৃত শুটকি যাচ্ছে- ঢাকা, চট্রগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, বগুড়া, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
জেলায় বছরের অনান্য সময়ে শুটকি কেনাবেচা হলেও শীতের সময় এর উৎপাদন ও বিক্রি দুটোই বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে পাইকারী ও খুচরা দোকানে শুটকির কদর বাড়ে। বাজারে শুটকির চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। শুটকির আড়ৎদাররা জানান, ছুরি মাছের শুটকি কেজিপ্রতি ২’শ ৮০ থেকে ৩’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিংরি কেজি ১৮০ থেকে ৩’শ, চেউয়া ১’শ থেকে ২৫০, লাইট্রা ৪’শ থেকে ৫’শ , মলা কেজি প্রতি ৪’শ ৮০ থেকে ৫’শ, অনুফা ৩৫০ থেকে ৪’শ, পোয়া ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ, কাচকি ৪’শ থেকে ৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শহরের নতুন বাজার, কালীনাথ রায়ের বাজারের শুটকির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হচ্ছে শুটকির কেনা-বেচা। বর্তমানে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের খাবারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে শুটকি। ভর্তাসহ নানান প্রজাতির খাবারে শুটকির ব্যবহার বাড়ছে। তবে দেশি মাছের শুটকির চাহিদার কথা জানান তারা।
জানা যায়, শীত মৌসুমে ইলিশের সংকট থাকায় অনেক জেলেই বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় তাই বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে শুটকি তৈরির কাজ বেছে নিয়েছেন অনেক জেলে। মাছ ধরার পাশাপাশি শুটকি তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছে। প্রথম দিকে সীমিত আকারে শুটকি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর পরিধী বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে ব্যাপক আকারে শুটকি হয়ে থাকে।
শহরের কালীনাথ রায়ের বাজারের শুটকি বিক্রেতা লোকমান হাসেন বলেন, শীতের সময় জেলায় শুটকির বাজার জমজমাট থাকে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও জেলার বাইরে থেকে আসা শুটকি বিক্রি করেন তারা। দৈনিক এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার টাকার শুটকি বিক্রি হয়। অপর ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও ভোলায় শুটকির এত চাহিদা ছিলোনা। কিন্তু সাম্প্রতিক এর চাহিদা বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছেন।
নতুন বাজারের শুটকি বিক্রেতা নুর ইসলাম জানান, তার এখানে অনুফা, বদর ছুরি, পোয়া, লাইট্রা, চিংড়ি, লাল চেউয়া, কাচকি, মলমদা বেশি বিক্রি হয়। শীতের সময় অনান্য মাছের আমদানি কম থাকায় শুটকি বেশি বিক্রি হয়।
এদিকে জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের পূর্ব ঢালচর, কুকরি-মুকরি ইউপির চর পাতিলা ও মনুরা, চর মানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া, হাজারিগঞ্জের চর ফকিরা এবং দুলার হাট থানার আশার চরে শুটকি উৎপাদন হয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর যাবত। নতুন করে আসলামপুর ও চরমাদ্রাজ ইউনিয়নে শুটকি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া মনপুরা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে শুটকি উৎপাদন চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে। একইসাথে কক্সবাজার, কুয়কাটাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুটকি জেলায় আসে।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, এখানে সাধারণত চেউয়া মাছের শুটকিটা বেশি হয়। এছাড়া রুপচাঁদা, লইট্টা, অনুফা, কাচকি মাছেরও শুটকি হয়। বিশেষ করে কুকরি-মুকরির চর পাতিলা, মনুরা, ঢালচরের পূর্ব ঢালচর শুটকি’র জন্য বেশ বিখ্যাত।
দুলারহাট মাছ বাজারের শুটকি আড়ৎদার মো. আব্বাস মিয়া বলেন, দুলারহাট মাছ বাজার শুটকির জন্য এই অঞ্চলের সর্ব বৃহৎ একটি বাজার। মৌসুমে এই বাজারে কয়েক কোটি টাকার শুটকি বেঁচা-কেনা হয়। এখান থেকে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুটকি পাঠান তারা। কয়েক হাজার পরিবার সরাসরি এই খাতের সাথে জড়িত।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্ল্যাহজানান, জেলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুটকি উৎপাদন হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর উৎপাদন বেড়েছে। ৮ থেকে ৯ হাজার মানুষ এই খাতের সঙ্গে জড়িত। দিন-দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুটকি। এতে করে জেলেরাও লাভবান হচ্ছে।