বাসস
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৫

টুঙ্গিপাড়ার ৪ বিলের পতিত ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : ৩০ বছর ধরে পতিত থাকা  গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৪ বিলের ৫০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে । এসব পতিত জমিতে অন্তত ৩ হাজার মেট্রিক টন বোরোধান উৎপাদিত হবে।গত ৬ ও ৭ জানুয়ারি  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া সফর করেন। ৭ জানুয়ারি তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের জলাবদ্ধ পতিত পুবের বিল পরিদর্শণ করেন। তিনি এ বিল পরিদর্শন করে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার জলাবদ্ধ পতিত জমিসহ দেশের এমন সব পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন।তিনি চাষাবাদ বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব ¡অরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুবের বিলে ১০০ বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করা হয়েছে।এটি দেখে পুবের বিল হোগলার বিল, তারাইল বিল ও জোয়ারিয়ার বিলের জলাবদ্ধ পতিত জমির মালিকরা বোরোধান আবাদ শুরু করেছেন। জলাবদ্ধ পতিত জমিতে এখন উৎসবের আমেজে বোরোধান আবাদ শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুবের বিল পরিদর্শন করে জলাবদ্ধ পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। আমরা তারপর ওই বিলে ১০০বিঘা জমিতে বোরোধান আবাদ করেছি। এটি দেখে পুবের বিল, হোগলার বিল, তারাইল বিল ও জোয়ারিয়ার বিলের জলাবদ্ধ পতিত জমির মালিকরা বোরোধান আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তারা সেখানে বোরোধান আবাদ করছেন। ওই ৪ টি বিলের জলাবদ্ধ পতিত ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ চলছে ।এসব জমি থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হবে।যার বাজার মূল্য ৭ কোট ৫০ লাখ টাকা।
এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), পানিউন্নয়নবোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাসমান বেডে সবজি, মসলা উৎপাদান সম্প্রসারণ, গবেষণা ও জনপ্রিয় করণ প্রকল্প কাজ করছে। এসব বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষকরা আগ্রহভরে জলাবদ্ধ পতিত জমিতে ধান চাষ করছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা পুবের বিলে জলমগ্ন জমিতে কচুরিপানার ভাসমান বেড তৈরি করেছি। এখনে সবজি,ফল ও মসলার চাষাবাদ করা হয়েছে। এখান থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার সবজি,ফল ও মসলা উৎপাদিত হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পুবের বিলের কৃষক মোঃ মফিজুর শেখ বলেন(৫৫) বলেন, আমাদের বিলের জমিতে ২৫/৩০ বছর ধরে কোন চাষাবাদ হয় না। জলাবদ্ধ এ বিলের জমি পতিত পড়ে থাকত ।এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুবের বিলে ১০০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে।এটি দেখে আমরা আমদের জমিও চাষাবাদ করেছি। এ বছর এখান থেকে ধান ফলিয়ে ঘরে তুলব ইনশাল্লাহ ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল বিলের কৃষক ওসমান শেখ (৫৯) বলেন, পুবের বিলে ধান রোপণ করা হয়েছে।এটি দেখে ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে আমরাও জলাবদ্ধ পতিত জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানের আবাদ বাড়িয়ে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমি তারাইল বিলে আমার পতিত ২ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার হোগলা বিলের কৃষক ময়েনুর (৫০) বলেন, বিলের অনেক কৃষকই জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতে ধান চাষাবাদে নেমেছেন। তাদের দেখাদেখি আমিও ১ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ৫২ শতাংশের এ ১ বিঘা জমি থেকে এ বছর আল্লাহ সহায় হলে ৫০ মণ ধান ঘরে তুলব।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলাবদ্ধ পতিত জমিতে ধান চাষের আহবান জানিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন।এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাংলাদেশ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় গোপালগঞ্জের  ইনচার্জ ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুবের বিলের চাষাবাদের সুবিধার্থে আমরা একটি সেচ পাম্পের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়া এ বিলে বাংলাদেশ ধানগবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত  ব্রি হাইব্রিড ধান-৩, ব্রি হাইব্রিড ধান-৪ সহ অন্যন্য প্রজাতির ধান আবাদ করা হয়েছে। এ ধানের ফলন বেশ ভালো হবে। এখান থেকে ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন বলে আমি প্রত্যাশা করছি।